কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না বাগেরহাটের রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রাংশ চুরি। গত ছয় মাসে চুরি হওয়া চার হাজার কেজি তামার তার, বিপুল পরিমাণ প্লেন শিট, টিনসহ নানা সরঞ্জাম উদ্ধার করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
এই সময়ে চোরচক্রের অর্ধশতাধিক সদস্যকে আটক করা হয়েছে। তারপরও থেমে নেই চুরি। এই অবস্থায় নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
শুধু এ বছরেই চুরি হচ্ছে এমন নয়, রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের পর থেকেই শুরু হয় ছোটখাটো চুরি। অবকাঠামো উন্নয়নকাজ চলাকালেও ঘটছে চুরির ঘটনা। ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে প্রতিষ্ঠানটি। চুরি বন্ধ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভেতরে পুলিশ ক্যাম্প, আনসার ক্যাম্প, বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী রয়েছেন। এরপরও চোরেরা সীমানা প্রাচীর ডিঙিয়ে তামার তার, জিআই পাইপ, লোহার পাইপ, অ্যালুমিনিয়াম টিন শিটসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম চুরি ও পাচার করছে।
জানা গেছে, নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ৯১৫ একর সীমানার মধ্যে ৪৫০ একর প্রাচীরবেষ্টিত। এই প্রাচীরে ৯টি ফটক রয়েছে। এ ছাড়া ডি ব্লকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ৩০০ একর জায়গায় তিন থেকে সাড়ে তিন ফুট উঁচু কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে যন্ত্রাংশ রাখা হয়েছে। কাঁটাতারের বেড়াগুলোর অবস্থাও নাজুক। বড় বড় আগাছা জন্মানোয় জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া সেখানে নিরাপত্তাকর্মীর যথেষ্ট অভাব রয়েছে। যার ফলে প্রতিনিয়ত চুরির ঘটনা ঘটছে বলে বলে মনে করেন তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের আশপাশের বাসিন্দারা।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব-৬) সদস্যরা চোরচক্রের ১৯ জনকে আটক করেছে। এসব অভিযানে ২ হাজার ১৫০ কেজি তামার তারসহ বিপুল পরিমাণ লোহার পাইপ উদ্ধার করেছেন র্যাব সদস্যরা।
এ ছাড়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে দায়িত্বরত খুলনা আনসার ব্যাটালিয়ন-৩-এর সদস্যরা ২৩ চোরকে আটক করেছেন। এ সময় চুরি যাওয়া প্রায় ৩৩ লাখ টাকার মালামাল উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ১ হাজার ৬৪২ কেজি তামার তারসহ জিআই পাইপ, কপ্টার টিনসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম রয়েছে।
খুলনা আনসার ব্যাটালিয়ন-৩-এর অধিনায়ক চন্দন দেবনাথ বলেন, ‘তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য ৭৫ জন আনসার-ব্যাটালিয়ন সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। এলাকার আয়তনের তুলনায় নিরাপত্তাকর্মীর এই সংখ্যা অপ্রতুল। কেন্দ্রের পশ্চিম পাশের নদীপথ অরক্ষিত থাকাটাও চোরদের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। তারপরেও চুরির সঙ্গে জড়িত ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। এই সময় অন্তত ৩৩ লাখ টাকার মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে।’
রামপাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামসুদ্দিন বলেন, গত দুই বছরে পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর হাতে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে চুরির কাজে জড়িত থাকায় শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। এ সময় বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য আনা বিপুল পরিমাণ তামার তার, জিআই পাইপ, লোহার পাইপ, কাটার ব্লেডসহ নানা সামগ্রী জব্দ করা হয়। এর মধ্যে কয়েকজন জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবারও চুরিতে লিপ্ত হয়েছে। তবে আগের তুলনায় চুরি কমেছে।
রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উপব্যবস্থাপক আনোয়ারুল আজিম বলেন, নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।