হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়

বিদ্যালয়ের জমিতে ৩৯১টি দোকান, ভাড়া নেয় কলেজ

  • বিদ্যালয়ের নামে ২.৬৭ একর জমি, দখলে আছে ০.৪৫ একর।
  • দোকানগুলোর ভাড়ার প্রায় ৭০ লাখ টাকার ভ্যাট দেওয়া হয়নি।
  • ১৫ শিক্ষকের মধ্যে প্রধান শিক্ষকসহ নয়জনের নিয়োগ অবৈধ।
  • তদন্তে ধরা পড়েছে বিভিন্ন অনিয়ম, ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ।
রাহুল শর্মা, ঢাকা 
Thumbnail image

জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।

এ ছাড়া ওই বিদ্যালয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে শিক্ষক নিয়োগ, বিদ্যালয়ের জমি ভাগাভাগি, প্রয়োজন না থাকলেও শিফট খোলাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ধরা পড়েছে তদন্তে। রাজধানীর মিরপুরের শাহ আলী থানা এলাকার হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় নিয়ে এই তদন্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর। তদন্ত প্রতিবেদন ৩ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে পাঠিয়েছে অধিদপ্তর। সূত্র বলেছে, প্রতিবেদনে অনিয়মের কারণে ৯ শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল ও বেতন-ভাতা বাবদ নেওয়া অর্থ আদায়, ভ্যাট ফাঁকির অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা, বিদ্যালয়ের জমি নেওয়াসহ দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। চলতি বছরের ২২ এপ্রিল থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত এই তদন্ত করেন অধিদপ্তরের তৎকালীন শিক্ষা পরিদর্শক স্বরূপ কুমার কাহালীসহ দুই কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক কাজী মো. আবু কাইয়ুম আজকের পত্রিকাকে বলেন, হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে যেসব অনিয়ম হয়েছে, সেগুলো তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে মন্ত্রণালয়।

১৯৭৪ সালের ১ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করা হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থী রয়েছে ৬৯৯ জন। শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী ২২ জন। পরে বিদ্যালয়ে উচ্চমাধ্যমিক স্তর চালু করা হয়। ২০০০ সালে ডিগ্রি স্তর চালুর পর হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে বিদ্যালয়কে আলাদা করে দেওয়া হয়।

তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, বিদ্যালয়টির মোট জমির পরিমাণ ২.৬৮ একর। এর মধ্যে ২.৬৭ একর জমি বিদ্যালয়ের নামে খারিজ হয়েছে। তবে এখন বিদ্যালয়ের দখলে আছে মাত্র ০.৪৫ একর জমি।

সূত্র বলেছে, হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের জমিটি জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ থেকে বরাদ্দ নেওয়া। বরাদ্দের শর্ত অনুযায়ী, সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনো বাণিজ্যিক স্থাপনা করা যাবে না।

ডিআইএর তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নার্গিস আক্তার ডিআইএর কাছ থেকে জানার পরামর্শ দিয়ে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় জবাব চাইলে জবাব দেবেন।

৩৯১ দোকান নির্মাণ: তদন্ত দলের কাছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেছেন, ২.৬৮ একর জমির মধ্যে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি রেজল্যুশনের মাধ্যমে দরগাহ সরকারি প্রাইমারি বিদ্যালয়কে ০.৫০ একর এবং হযরত শাহ্‌ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজকে ১.৬৭ একর জমি দিয়েছে। তবে রেজিস্ট্রি হয়নি।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০২ সালে হযরত শাহ্‌ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজের তিন দিকে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের জন্য টেকনোপোল কনস্ট্রাকশন নামে একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেন কলেজটির তৎকালীন অধ্যক্ষ শিরিন আক্তার। সেখানে ২০০৭ সালে ৩৫৫টি ও ২০১৯ সালে ৩৬টি দোকান নির্মাণকাজ শেষ হয়। তবে নির্মাণকারী কোম্পানি কয়টি এবং বিদ্যালয় কয়টি দোকান পাবে, তা চুক্তিতে উল্লেখ নেই।

প্রতিবেদন বলছে, কলেজের নামে জমি না থাকায় ওই নির্মাণ চুক্তি অবৈধ। এসব দোকানে কলেজের মালিকানাও বৈধ নয়। এ ছাড়া নির্মিত দোকানগুলোর মধ্যে ৭০টি দোকানের ভাড়াসংক্রান্ত কোনো চুক্তিপত্রও নেই। এসব কারণে এ দোকানগুলো কলেজের নামে থাকলে সেগুলো বিদ্যালয়কে ফেরত নিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে দান করা জমির সীমানা নির্ধারণ করে বিদ্যালয়ের দখলে এনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানাতে বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩৯১টি দোকান থেকে প্রাপ্ত ভাড়া এবং অন্যান্য জমিদারি ভাড়া বাবদ আদায় করা অর্থ থেকে সরকারকে ৬৯ লাখ ৫৫ হাজার ৯৫২ টাকা ভ্যাট দেওয়া হয়নি। এই অর্থ ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

নয়জন শিক্ষকের নিয়োগ অবৈধ: ডিআইএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যালয়টির ১৫ জন শিক্ষকের মধ্যে প্রধান শিক্ষকসহ নয়জনের নিয়োগ অবৈধ। তাঁরা হলেন প্রধান শিক্ষক নার্গিস আক্তার, সহকারী শিক্ষক মাহফুজা আক্তার, ডলি সাহা, শাহনাজ আখতার, জেসমিন আহমেদ, লক্ষ্মী রানী দেবনাথ, কহিনুর নেছা, হোসনে আরা হ্যাপী ও ইকবাল আলী। তাঁদের নিয়োগে অনিয়ম, নিয়োগের সময় সব শর্ত পূরণ না হওয়ায় তাঁদের বেতন-ভাতা হিসেবে দেওয়া মোট ১ কোটি ৩৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা অর্থ ফেরত নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী নেই, তবু একাধিক শিফট: শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইন অনুযায়ী, কোনো শ্রেণিতে ১৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী হলে পাঠদানের সুবিধার জন্য একাধিক শিফট চালু করা যাবে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত চার বছর এই বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী ছিল না। এরপরও দ্বিতীয় শিফট চালু করা হয়েছে। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রতিবছর কমছে। তাই প্রতিবেদনে দ্রুত শিক্ষার্থী বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

কিশোরগঞ্জে বিএনপি নেতা হত্যা: সাবেক চেয়ারম্যানসহ গ্রেপ্তার ৪

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত