ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণের জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে রাজবাড়ীর পদ্মা নদীতে ২২ দিনের জন্য ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময় ইলিশ ধরা, বিক্রি, মজুত, বাজারজাত ও পরিবহন নিষিদ্ধ থাকবে। নিষেধাজ্ঞার এ সময়ে জেলেরা যেন নদীতে নেমে মাছ শিকার না করেন সেজন্য অভিযান পরিচালনা করা হবে।
সরেজমিনে গতকাল জেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, জেলেদের চোখে-মুখে চিন্তার ভাঁজ। অনেকেই নদীতে নৌকা নিয়ে বসে আছেন। কেউ কেউ তাঁদের ছেঁড়া জাল মেরামত করছেন। কেউ নদী থেকে নৌকা ডাঙায় তুলেছেন মেরামতের জন্য। জেলেরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার সময় তাঁদের কষ্টের সীমা থাকে না। অনেক জেলে পরিবার না খেয়ে দিন পার করে। নিষেধাজ্ঞার সময় সরকার থেকে খাদ্যসহায়তা দেওয়ার কথা থাকলেও সেটা এখনো পাননি তাঁরা। দ্রুত সময়ের মধ্যে খাদ্যসহায়তার দাবি জানান তাঁরা।
সদর উপজেলার জেলে হযরত আলী বলেন, ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি নদী থেকে মাছ শিকার করেন। সেই মাছ বাজারে বিক্রি করে সংসার চালান। মাছ ধরা বন্ধের সময় সরকার থেকে ২০ কেজি চাল দেওয়া হলেও তা দিয়ে ১০ দিনের বেশি চলতে পারেন না। তাঁর পরিবারের সদস্যসংখ্যা আট। তাঁর দাবি, আরও বেশি চাল দেওয়ার, সে সঙ্গে কাঁচাবাজার কেনার জন্য নগদ টাকা দেওয়ার জন্য।
আরেক জেলে সেলিম খাঁ বলেন, ‘২২ দিনের মাছ ধরা বন্ধ দিছে ভালো কথা। আমরা নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ ধরতে নদীতে যাব না। তাহলে খাব কী? সরকার প্রতিবছর জেলেদের ২০ কেজি করে চাল দেয়। আমি ১৫ বছর ধরে মাছ ধরি নদী থেকে, আজ পর্যন্ত কোনো সহায়তা পাই নাই।’
আয়নদ্দিন হলদার বলেন, ‘কেউ ইচ্ছা করে নদীতে যায় না মাছ ধরতে। পেটে ভাত না থাকলে ঘরের সামনে বাঘ বসে থাকলেও সে ঘর থেকে বের হবে। সরকার ২২ দিনের খাবারের ব্যবস্থা করে দিলে মাছ ধরতে যাব না।’
হারুন বলেন, ‘প্রতিবছরই সরকার থেকে ২০ কেজি করে চাল পাই। এ বছর এখনো পাই নাই। চাল নেওয়ার সময় দেখি যারা কোনোদিন মাছ ধরে নাই তাঁরা চাল পাচ্ছেন আর যাঁরা প্রকৃত জেলে তাঁরা চাল পান না। সে সময় ওই জেলেরা যান নদীতে মাছ ধরতে। সরকারের কাছে দাবি, যাঁরা প্রকৃত জেলে তাঁদের যেন চাল দেওয়া হয়।’
রাজবাড়ী জেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, এই জেলায় নিবন্ধিত মোট জেলে রয়েছেন প্রায় ১১ হাজার। এর মধ্যে ইলিশ শিকারি জেলে রয়েছেন ৬ হাজার। নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেরা যেন নদী থেকে ইলিশ শিকারে না যান তার জন্য প্রতিটি জেলে পরিবারকে ২০ কেজি করে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হবে। গত বছর জেলায় ৪ হাজার ৭০০ জন মৎস্যজীবীকে ৯৪ মেট্রিক টন খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ বছর আরও বেশি জেলেকে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হবে।
রাজবাড়ী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেরা যেন নদীতে না নামেন তার জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। জেলা প্রশাসন, জেলা মৎস্য বিভাগের কয়েকটি মোবাইল টিম থাকবে অভিযানে। তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যেই ৬ হাজার জেলেকে খাদ্যসহায়তা দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। জেলেদের বরাদ্দকৃত খাদ্যসহায়তা খুব দ্রুতই দেওয়া হবে।