মানুষের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা বুক। আর এই বুকের মধ্যকার ব্রংকাস, ফুসফুস, দুটি ফুসফুসের মাঝের অংশ বা মিডিয়াস্টিনাম প্রভৃতি জায়গায় ক্যানসার হয়ে থাকে। আবার স্তন, কিডনি, জরায়ু, ওভারি, টেসটিস, থাইরয়েড প্রভৃতির ক্যানসারও ফুসফুসে ছড়ায়। বুকের মধ্যে শ্বাসনালি বা ব্রংকাসের ক্যানসার মারাত্মক বিপদের কারণ। তাই রোগটি সম্পর্কে ধারণা নেওয়া, সঠিক সময়ে চিকিৎসা নেওয়া ও বুকে ব্যথা বা শক্ত কিছু অনুভূত হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
শ্বাসনালির ক্যানসার কাদের বেশি হয়
শ্বাসনালির ক্যানসারে আক্রান্তদের শতকরা ৪০ ভাগ পুরুষ। গবেষণায় দেখা যায়, শ্বাসনালির ক্যানসারে আক্রান্ত নারীদের সংখ্যা পুরুষের প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ হতে পারে। এই ক্যানসার ৪৫ থেকে ৭৫ বছর বয়সীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। শ্বাসনালির ক্যানসারের একটি প্রধান কারণ ধূমপান। যে যত বেশি ধূমপান করে, তার এই রোগের প্রবণতা তত বেশি। শুরুতে সঠিক চিকিৎসা না হলে অল্প দিনেই রোগীর মৃত্যু হয়ে থাকে।
লক্ষণ
বুকের লক্ষণ
রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা
এক্সরে
বিভিন্ন অবস্থা অনুযায়ী লক্ষণ জানার জন্য এটি করতে হয়। কোনো অংশের ঘন, গাঢ় ওপাসিটি বা দাগ দেখা দিতে পারে। ফুসফুসের দাগের সঙ্গে ছোট ছোট গর্ত দেখা দিতে পারে। ফুসফুসের বিরাট অংশ বা একটি গোটা ফুসফুস চুপসে গেলে বড় অংশজুড়ে এটি দেখা দেয়। অনেক সময় ফুসফুসের পর্দায় পানি জমতে পারে, যাকে প্লুরাল ইফিউশন বলে।
ব্রংকোসকোপি
এর দ্বারা শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে ফুসফুসের টিস্যু কিছুটা বের করে এনে হিস্টোলজিক্যাল পরীক্ষা করা সম্ভব হয়। এর সাহায্যে সার্জিক্যাল চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে সুবিধা হয়। মাঝবয়সী এবং বয়স্ক লোকদের ক্ষেত্রে এ রোগ বেশি হয়ে থাকে।
চিকিৎসা
অপারেশন পদ্ধতির দ্বারা বুকের মধ্যে ফুসফুস বা তার একটি খণ্ড কেটে বাদ দিতে হয়। প্রথম অবস্থায় রোগ ধরা পড়লে এরূপ করা সম্ভব হয়। এভাবে দ্রুত চিকিৎসা করা হলে শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ রোগী ৫ বছর বা তার বেশিও বেঁচে থাকতে পারে।
খুব ছোট টিউমার সবেমাত্র শুরু হলে ডিপ এক্সরে দিয়ে সারানো সম্ভব হয়। তবে অনেক সময় আবার তা শুরু হয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে জটিল অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে। অনেক সময় কোমোথেরাপি দিয়ে তারপর ডিপ এক্সরে চিকিৎসা করা হয়। তবে টিউমার ছোট ও প্রাথমিক অবস্থাতে ধরা পড়লেই কেবল তাতে অনেকটা সুফল মিলে বা ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
লেখক: বক্ষব্যাধি, হৃদরোগ, রক্ত, খাদ্যনালী বিশেষজ্ঞ ও সার্জন সিনিয়র কনসালট্যান্ট এবং হেড অব ডিপার্টমেন্ট ইউনাইটেড হাসপাতাল গুলশান-২, ঢাকা এবং
সাবেক অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, জাতীয় বক্ষব্যাধী হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা