Ajker Patrika

ঋতু অনুযায়ী ফল খাওয়ার উপকারিতা

আলমগীর আলম
আপডেট : ২২ মার্চ ২০২৫, ১৬: ১৭
ঋতু অনুযায়ী ফল খাওয়ার উপকারিতা

মে মাসের আনারস ফেব্রুয়ারিতে পাওয়া যায় এখন। কিংবা এপ্রিলের তরমুজ পাওয়া যায় জানুয়ারিতে। আমরা সেcসব খাচ্ছি। বিক্রি বেশি হওয়ায় দিনে দিনে আগাম ফলনের দিকে ঝুঁকছে আমাদের কৃষি। কিন্তু এই প্রবণতা কতটা স্বাস্থ্যসম্মত, তা জানা খুব জরুরি।

গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত—এই ঋতুচক্রের ওপর ভিত্তি করে আমাদের দেশে ফলমূল জন্মায়। গ্রামাঞ্চলে এই ফলগুলো সাধারণত ঋতু অনুযায়ীই পাওয়া যায়। এগুলো স্থানীয় জীবনযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কোন ঋতুতে কী খাবেন।

গ্রীষ্মকাল (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ, এপ্রিল-মে)
গ্রীষ্মে ফলের রাজা আম। গোপালভোগ, ল্যাংড়া, হিমসাগর, ফজলি, হাঁড়িভাঙা ইত্যাদি নানান জাতের আম জন্মে প্রায় পুরো দেশে। এ সময় আরও পাওয়া যায় কাঁঠাল, লিচু, জাম, তরমুজ, বাঙ্গি ইত্যাদি।

বর্ষাকাল (আষাঢ়-শ্রাবণ, জুন-জুলাই)
এ সময় প্রচুর পাওয়া যায় পেয়ারা। বর্ষায় পেয়ারার উৎপাদন বাড়ে। এ ছাড়া আনারস, বিভিন্ন ধরনের কলা, জামরুল, ডালিম ইত্যাদি বর্ষার ফল।

শরৎকাল (ভাদ্র-আশ্বিন, আগস্ট-সেপ্টেম্বর)
আমড়া এই ঋতুর ফল। কামরাঙা, বেল, নারকেল, ডেউয়া ইত্যাদি পাওয়া যায় এ সময়।

হেমন্তকাল (কার্তিক-অগ্রহায়ণ, অক্টোবর-নভেম্বর)
হেমন্তে নারকেলের উৎপাদন বেশ বাড়ে। এ ছাড়া পাওয়া যায় পেয়ারা, আমলকী, জলপাই, কমলা। হেমন্তের শেষ ভাগ থেকে কমলা ফলতে শুরু করে।

শীতকাল (পৌষ-মাঘ, ডিসেম্বর-জানুয়ারি)
কমলা শীতের অন্যতম জনপ্রিয় ফল। এ ছাড়া পাওয়া যায় আপেল, পেয়ারা, ফুটি, আঙুর, ডালিম, বরই, কুল, তেঁতুল ইত্যাদি পাওয়া যায়।

বসন্তকাল (ফাল্গুন-চৈত্র, ফেব্রুয়ারি-মার্চ)
বসন্তের মাঝামাঝি পাওয়া যায় কাঁচা আম। এ ছাড়া পাওয়া যায় কাঁচা কলা, বাঙ্গি (চিনাই) ইত্যাদি।

বিভিন্ন ঋতুতে ফল খাওয়ার উপকারিতা

ঋতু অনুযায়ী ফল খেলে সেই সময়ের উপযোগী পুষ্টি পাওয়া সম্ভব। এ ছাড়া প্রতিটি ঋতুতে ফল প্রাকৃতিকভাবে পাকে। তাই সেগুলোতে ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বেশি থাকে।

সঠিক ঋতুতে ফলের ফ্ল্যাভোনয়েড ও পলিফেনলের মতো উপাদান বেশি থাকে। এগুলো হৃদ্‌রোগ ও ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

প্রকৃতি ঋতু অনুযায়ী এমন ফল জন্মায়, যেগুলো শরীরের বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করে। বৈজ্ঞানিকভাবে এটি বায়োসিনক্রোনিসিটি নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে শরীর ও প্রকৃতির মধ্যে সমন্বয় সাধিত হয়।

ঋতু অনুযায়ী ফল শরীরের হজমপ্রক্রিয়ার সঙ্গে মানানসই।

ঋতুভেদে ফল স্থানীয়ভাবে পাওয়া যায়। এতে কৃত্রিম রাসায়নিক বা দীর্ঘ পরিবহনের প্রয়োজন হয় না। এটি পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ন রাখে এবং কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমায়।

অসময়ে ফল খাওয়ার ক্ষতি

অসময়ে ফল খাওয়ার অর্থ হলো, ঋতুর বাইরে গিয়ে কৃত্রিম উপায়ে সংরক্ষিত বা উৎপাদিত ফল খাওয়া। বিজ্ঞান এর কিছু সম্ভাব্য ক্ষতি চিহ্নিত করেছে—

কোল্ডস্টোরেজে দীর্ঘদিন রাখা ফলে ভিটামিন সি ও বি কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, আম কিংবা আনারসের মতো ফল ঋতুর বাইরে খেলে এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মান ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।

কৃত্রিমভাবে পাকানো ফলে পুষ্টির পরিবর্তে ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকতে পারে।

অসময়ে ফল পাকাতে ইথিলিন গ্যাস বা অন্যান্য রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। এগুলো লিভার ও কিডনির ক্ষতি করতে পারে। ২০১৯ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এ ধরনের ফলে থাকা অ্যাসেটিলিনের মতো উপাদান ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

অসময়ে ফল শরীরের স্বাভাবিক চাহিদার সঙ্গে মেলে না। যেমন শীতে তরমুজ খেলে শরীর ঠান্ডা হয়ে ডায়রিয়া বা সর্দির সমস্যা হতে পারে। কারণ, এটি গ্রীষ্মের জন্য উপযোগী।

ঋতু অনুযায়ী ফল শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে সেই সময়ের জন্য প্রস্তুত করে। অসময়ে ফল খেলে এই ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

বিজ্ঞান কী বলে

গবেষণা: জার্নাল অব অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড ফুড কেমিস্ট্রিতে (২০১৫) প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, ঋতুতে পাওয়া ফলের তুলনায় কোল্ডস্টোরেজে রাখা ফলে পুষ্টিগুণ ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।

আয়ুর্বেদ ও বিজ্ঞানের মিল: আয়ুর্বেদে বলা হয়, ঋতু অনুযায়ী খাদ্য শরীরের বাত, পিত্ত, কফ ইত্যাদির মতো ‘দোষ’ নিয়ন্ত্রণ করে। আধুনিক বিজ্ঞান এটিকে মাইক্রোবায়োম এবং মেটাবলিজমের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করে দেখে।

বিজ্ঞান মতে, ঋতু অনুযায়ী ফল খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী। কারণ, এটি প্রাকৃতিকভাবে পুষ্টি সরবরাহ করে এবং পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অসময়ে ফল খাওয়া সম্পূর্ণ ক্ষতিকর নয়। তবে কৃত্রিম প্রক্রিয়ার কারণে পুষ্টিগুণ কমে যাওয়া, রাসায়নিকের ঝুঁকি এবং শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।

পরামর্শ দিয়েছেন: খাদ্য পথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ; প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত