Ajker Patrika

হেপাটাইটিস বি লক্ষণ ও চিকিৎসা

ডা. অদিতি সরকার
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

হেপাটাইটিস বি একটি ভাইরাল রোগ। এটি লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এ রোগের কারণ হেপাটাইটিস বি ভাইরাস। এটি প্রধানত রক্ত পরিসঞ্চালন, শারীরিক সম্পর্ক, সুচ বা ইনজেকশনের ব্যবহার কিংবা জন্মের সময় মায়ের কাছ থেকে শিশুর মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। এর দ্রুত মারাত্মক হয়ে ওঠার আশঙ্কা থাকে। এটি দীর্ঘস্থায়ী হলে লিভারের সার্বিক কার্যক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

হেপাটাইটিস বি রোগের লক্ষণ

হেপাটাইটিস বি-এর লক্ষণ কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। অনেক সময় রোগী দীর্ঘ সময় পর্যন্ত কোনো লক্ষণ অনুভব না-ও করতে পারে, বিশেষত যদি এটি পুরোনো বা ‘ক্রনিক’ হয়ে যায়। তবে সাধারণত হেপাটাইটিস বি-এর প্রাথমিক লক্ষণগুলো হলো—

পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি: রোগী পেটের ডান পাশে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করতে পারে, যেখানে লিভার অবস্থিত।

অস্বাভাবিক ক্লান্তি বা অবসন্নতা: হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত রোগী অনেক সময় অবসন্নতা, অস্থিরতা বা অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করেন।

ত্বকে হলুদ ভাব বা জন্ডিস: এটি হেপাটাইটিস বি-এর একটি পরিচিত লক্ষণ। ত্বক বা চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যেতে পারে।

বমি, বমির অনুভূতি বা অরুচি: খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যেতে পারে এবং বমি বা বমির অনুভূতি হতে পারে।

চামড়ায় লালচে দাগ: কিছু রোগীর ত্বকে লালচে দাগ বা র‌্যাশের মতো পরিবর্তনও দেখা যেতে পারে।

পেট ও পায়ে পানি জমা: দীর্ঘমেয়াদি ক্ষেত্রে পেটে, পায়ে পানি আসতে পারে, রক্তবমি ও কালো পায়খানা হতে পারে।

হেপাটাইটিস বি-এর চিকিৎসা

হেপাটাইটিস বি-এর চিকিৎসা নির্ভর করে রোগীর অবস্থার ওপর। কিছু রোগী শুধু স্বাভাবিক চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন, তবে দীর্ঘস্থায়ী বা গুরুতর ক্ষেত্রে চিকিৎসা প্রয়োজন। এখানে হেপাটাইটিস বি-এর চিকিৎসার কিছু প্রধান পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো—

অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ: হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের বিস্তার কমাতে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এই ওষুধগুলো ভাইরাসের পুনরুৎপাদন রোধ করে, তবে তা পুরোপুরি নিরাময় করতে সক্ষম নয়। সাধারণত ল্যামিভিউডিন, টেনোফোভির, এন্টাকাভিরের মতো অ্যান্টিভাইরাল থেরাপি ব্যবহার করা হয়।

ইন্টারফেরন থেরাপি: কিছু ক্ষেত্রে ইন্টারফেরন নামে একটি শক্তিশালী চিকিৎসাপদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়, যা ভাইরাসের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। এটি শট বা ইনজেকশন আকারে দেওয়া হয়।

ভ্যাকসিনেশন: হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন অত্যন্ত কার্যকর। যাঁরা এই রোগে আক্রান্ত হননি, তাঁদের জন্য হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন প্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি রক্ত ও শরীরের অন্যান্য সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে।

লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন: খুবই গুরুতর বা দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বি, বিশেষ করে যখন লিভারের ফাংশন সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়, তখন লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন (লিভার প্রতিস্থাপন) একটি বিকল্প হতে পারে।

এটি একটি জটিল এবং দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসাপ্রক্রিয়া।

ডায়েট এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন: হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত রোগীর সুস্থ জীবনযাপন এবং সঠিক ডায়েট মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফ্যাট কম, প্রোটিনসমৃদ্ধ এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। পাশাপাশি মদ্যপান ও ধূমপান থেকে বিরত থাকতে বলা হয়।

নিয়মিত পর্যবেক্ষণ: ক্রনিক হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত রোগীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে যেতে হবে। এই পরীক্ষাগুলো রোগের অগ্রগতি এবং চিকিৎসার কার্যকারিতা পর্যালোচনা করতে সাহায্য করে।

হেপাটাইটিস বি একটি গুরুতর রোগ হতে পারে, তবে এর প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা সম্ভব। সঠিক সময়ের মধ্যে লক্ষণ চিহ্নিত এবং চিকিৎসা শুরু করলে রোগটি অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। হেপাটাইটিস বি থেকে রক্ষা পেতে ভ্যাকসিন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া এই রোগের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া একান্ত প্রয়োজন।

পরামর্শ দিয়েছেন: রেসিডেন্ট চিকিৎসক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত