ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরায় ভারী বর্ষণজনিত বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে অন্তত ২৪ জনে দাঁড়িয়েছে। রাজ্য সরকারের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ৬৫ হাজার ৪০০ জনকে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রবল বৃষ্টিপাত ও বন্যায় ২ হাজার ৩২টি স্থানে ভূমিধস হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৭৮৯টিতে উদ্ধারকাজ চালানো হয়েছে। গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ত্রিপুরা। গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ ত্রিপুরায় কাদার স্রোতে চাপা পড়ে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। ১৯ আগস্ট থেকে ত্রিপুরায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ১৭ লাখ ছাড়িয়েছে। রাজ্যজুড়ে সরকারিভাবে ৪৫০টি ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে।
বন্যায় ত্রিপুরায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর একটি গোমতী জেলা। পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক আয়ুব সরকার বিবিসিকে জানান, তিন দিন ধরে সব ধরনের যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন তিনি। গতকাল শুক্রবার সকালে চার্জ দিয়ে ফোন চালুর পর বিবিসির সঙ্গে কথা হয় তাঁর। তিনি বলেন, ‘আমাদের বাড়িটা এলাকার সবচেয়ে উঁচু জায়গায়। তাই প্রতিবেশীদের সবাই আমাদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু এখানেও যে পানি ঢুকে পড়বে, তা কেউ ভাবতে পারিনি।’
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ত্রিপুরার আট জেলায় ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। বন্যাকবলিত এলাকায় সহায়তার জন্য জোরদার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিমান বাহিনীর সদস্যরা। এ ছাড়া ন্যাশনাল ডিজস্টার রেসপন্স ফোর্সেরও (এনডিআরএফ) বাড়তি টিম মোতায়েন করা হয়েছে।
বিমান বাহিনীর দুটি সি-১৩০ এবং একটি এএন-৩২ বিমান ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তা দিচ্ছে। এ ছাড়া হেলিকপ্টারের মাধ্যমেও দুর্গত এলাকায় পৌঁছানো এবং ত্রাণ তৎপরতায় সহায়তা করা হচ্ছে।
ত্রিপুরার নদীগুলোর পানির স্তর এখনো উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি রয়ে গেছে। গোমতী, দক্ষিণ ত্রিপুরা, উনাকোটি ও পশ্চিম ত্রিপুরার মতো জেলাগুলো বন্যায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধলাই, খোয়াই, দক্ষিণ ত্রিপুরা, পশ্চিম ত্রিপুরা, উত্তর ত্রিপুরা ও উনাকোটি—ছয়টি জেলায় নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আট জেলায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যেই আবহাওয়া দপ্তর রাজ্যের অনেক জায়গায় নতুন করে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে।
আগরতলা থেকে সব রেল পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গোমতী, দক্ষিণ ত্রিপুরা এবং অন্যান্য বন্যাদুর্গত এলাকায় টেলিযোগাযোগ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। আসাম রাইফেলস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার সময় ৩৩৪ জন নাগরিককে উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের দুটি ইউনিট রাজ্যের অমরপুর, ভামপুর, বিশালগড় ও রামনগরে মোতায়েন করা হয়েছে।