হোম > ইসলাম

শবে বরাত সম্পর্কে কয়েকটি জরুরি কথা

ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক

পবিত্র শবে বরাতের ফজিলত ও মর্যাদা ইসলামে স্বীকৃত। তবে শবে বরাতের আমল নিয়ে অনেক বাড়াবাড়ি আছে। এ মহিমান্বিত রাত সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ এখানে তুলে ধরা হলো।

এক. রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিসে শবে বরাত বোঝাতে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ তথা ‘শাবানের মধ্য রজনী’ শব্দগুলো এসেছে। এ শব্দ দিয়ে রাতটির নামকরণ করলে হাদিসের সবচেয়ে সুন্দর অনুসরণ হয়। তাই এই রাতের নাম ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বললে সুন্নত পালন হবে। তবে শাবানের মধ্যরজনী, শবে বরাত ও লাইলাতুল বারাআতও বলতে পারেন। বলাটা জায়েজ, তবে সুন্নত হবে না। 

দুই. আরবি বারাআত শব্দের অর্থ মুক্তি, ছিন্ন করা, দায়মুক্তি ইত্যাদি। বারাআত শব্দটি ফারসি ভাষার ভেতর দিয়ে যাত্রা করে বাংলা ভাষায় প্রবেশ করায় চ্যুতি-বিচ্যুতির মাধ্যমে ‘বরাত’-এ পরিণত হয়েছে এবং সেই সঙ্গে অর্থগত পরিবর্তনও ঘটেছে। বাংলা ভাষায় বরাত শব্দটি এখন অনেকটাই সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা বা আপনজাত; যার অর্থ ভাগ্য। শবে বরাত মানে ভাগ্যরজনী। পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর সঙ্গে এখানে একটা ব্যাপক বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। রাতটা মূলত ক্ষমার। এখানে রিজিক বা আগামী এক বছরের ভাগ্য নির্ধারণ সম্পর্কিত কোনো কথা কোরআন ও বিশুদ্ধ হাদিসে নেই। 

তিন. এ রাত সম্পর্কে সুনানে ইবনে মাজাহর একটি পরিচ্ছেদে কয়েকটি হাদিস রয়েছে। হাদিসবিদগণ সেগুলোর পর্যালোচনা করে একটি হাদিস সহিহ্ বলে সাব্যস্ত করেছেন। এ রাতের ফজিলত সম্পর্কে বর্ণিত কয়েকটি হাদিসকে তাঁরা দুর্বল বলেছেন। এ রাতের আমল সম্পর্কিত হাদিসগুলোকে বানোয়াট বলেছেন। 

তবে যে সহিহ্ হাদিসটি পাওয়া যায়, তা থেকে এটা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তাআলা এ রাতে সব মানুষের দিকে মনোনিবেশ করেন এবং তাদের ক্ষমা করে দেন। তবে ব্যক্তিকে অবশ্যই শিরক ও হিংসামুক্ত হতে হবে। হাদিসের উদ্ধৃতি অনুযায়ী কোনো কোনো আলেম এ রাতকে উপরিপাওয়া হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। অর্থাৎ ব্যক্তি সারা বছর ইবাদত করলে এবং শিরক-হিংসা মুক্ত হলে এ রাতে ঘুমিয়ে থাকলেও আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। 

চার. এ রাতের আমল সম্পর্কে বর্ণিত অধিকাংশ হাদিসই বানোয়াট। ফিকহের কিতাবে এ রাতের বিশেষ সালাত সম্পর্কেও সতর্ক করা হয়েছে। বিখ্যাত হাদিস বিশারদ ইমাম নববি (রহ.)–সহ অনেকেই এ রাতে বিশেষ নামাজ আদায় এবং এ উদ্দেশ্যে মসজিদে মুসলমানদের একত্রিত হওয়াকে বেদাত আখ্যা দিয়েছেন। তবে এ রাতে কবর জিয়ারত ও দোয়া পড়ার বিষয়টি প্রমাণিত আমল। ফলে অন্যান্য রাতের মতো এ রাতে তাহাজ্জুদ ও কোরআন তিলাওয়াত করা যেতে পারে। 

পাঁচ. এ রাতে মসজিদে কোরআন-হাদিসের আলোচনা করা নিষিদ্ধ নয়। তবে বিশেষ পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক রাকাতের বিশেষ নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে একত্রিত হওয়াকে বেদাত বলেছেন আলেমগণ। এ মত দেওয়ার সময় নিশ্চয়ই তাঁরা নিজেদের সময়, সমাজ ও পরিস্থিতি বিচারে এনেছিলেন। বর্তমানে মসজিদবিমুখ মুসলিম উম্মাহকে কোরআন ও হাদিসের আলোচনায় আরও বেশি করে যুক্ত রাখার উদ্দেশ্যে এ রাতে মসজিদগুলোতে কোরআন-হাদিসের আলোচনার অনুষ্ঠান করা বেদাত হবে না; বরং এ ধরনের অনুষ্ঠানের অনুপস্থিতিই এ রাতে আতশবাজি ইত্যাদির মাধ্যমে যুবসমাজের বেসামাল শবে বরাত উদ্‌যাপনকে আরও বেশি উসকে দেবে। 

ছয়. এ রাত উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনায় আলিমগণ ইসলামের বিভিন্ন বিষয় মানুষকে বোঝাবেন। এ রাত সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে আলোচনা উপস্থাপন করবেন। অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা এড়িয়ে চলবেন। এরই মধ্যে যেসব বাড়াবাড়ি সমাজে প্রতিষ্ঠিত, সে সম্পর্কে মানুষের ভুল দূর করবেন।

এ রাতকে পবিত্র কোরআন নাজিলের রাত তথা ‘লাইলাতুন মুবারাকাহ’ বলে উপস্থাপন করা প্রতারণা ও আল্লাহর সম্পর্কে মিথ্যা প্রচার করার শামিল। মানুষ বিভিন্নভাবে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে। ফলে অসত্য তথ্য হাস্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। আর এটা সীমালঙ্ঘনও। 

সাত. এ রাত উপলক্ষে পরিবারের জন্য বিশেষ খাবার পরিবেশনের সঙ্গে ভাগ্য পরিবর্তনগত কোনো বিশ্বাস জড়িত থাকলে তা জায়েজ হবে না। তবে সাধারণভাবে ক্ষুধার্ত মানুষকে খাবার দেওয়া এবং দান-সদকা ইত্যাদি ভালো কাজ করা জায়েজ। 

আট. এ রাতে ফটকা, আতশবাজি ইত্যাদি নিয়ে মেতে থাকার কোনো যুক্তি নেই। এসব সীমালঙ্ঘন। ফলে তা কোনোভাবে জায়েজ নেই। 

নয়. এ রাতের আগে পরের দিনগুলো আইয়ামে বিজ তথা মাসের মধ্যভাগের দিন। এই দিনগুলোতে রোজা রাখা সুন্নত। এ আমল বিশুদ্ধ হাদিস থেকে প্রমাণিত। 

আল্লাহ তাআলা সব ধরনের সীমালঙ্ঘন থেকে আমাদের রক্ষা করুন। 

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

বছরজুড়ে রোজা রাখার সওয়াব লাভের উপায়

যেভাবে খাবার খাওয়া নবী (সা.)-এর সুন্নত

শাওয়াল মাসের বিশেষ আমল

পর্যটকদের মুসলিম ঐতিহ্য দেখিয়ে মুগ্ধ করেন তিনি

গ্রামের বাড়ি গেলে নামাজ ‘কসর’ করার বিধান

যেভাবে ভ্রমণ করতেন নবীজি (সা.)

মা-বাবার খেদমতে জান্নাত লাভের সুযোগ

প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা ইমানের দাবি

দাওয়াত খেয়ে যে দোয়া পড়তেন নবীজি (সা.)

ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত ও নিয়ম