‘রিকশায় ছাতা টাঙানোয় অনেকে টিপ্পনী কাটে। অন্য রিকশাওয়ালারা আমাকে নবাব শাহজাদা বলে। আমিও তাদের ঠাট্টা হেসে উড়িয়ে দেই। কারণ, আমি তো জানি রোদের তাপ আমার একদম সহ্য হয় হয় না। এতে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। তাই ড্রাইভিং সিটের ওপর ছাতা টাঙিয়েছি।'
কথাগুলো বলছিলেন ৫০ বছর বয়সী রিকশাচালক শহীদুল ইসলাম। তিনি রিকশার দুই হাতলের মাঝখানে বাঁশ দিয়ে একটি ছাতা বেঁধে নিয়েছেন। রিকশার ওপর ছাতা টাঙানো থাকায় অন্য সব রিকশা থেকে তাঁকে সহজেই আলাদা করা যায়। তাঁর এই ছাতার দিকে অনেকেই কৌতূহলের চোখে তাকায়। নেত্রকোনা পৌরসভার জয়নগর এলাকার আধুনিক সদর হাসপাতাল ও এর আশপাশের এলাকায় তিনি রিকশা চালান। বেশির ভাগ রিকশাচালকের মতো গামছা থাকলেও মুখে মাস্ক থাকায় তাঁর করোনা সচেতনতাও উল্লেখযোগ্য।
আজ শহীদুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়েছে। কথা প্রসঙ্গে উঠে আসে পরিবারের প্রসঙ্গও। ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন শহরের উত্তর সাতপাই এলাকায়। ছাতা টাঙিয়ে রিকশা চালানোয় অনেকে তাঁকে নবাব শাহজাদা বললেও তাঁর জীবন কিন্তু আয়েশের নয়। সংসার চালাতে রিকশা চালালেও রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে ছাতাটি টাঙিয়েছেন।
ছোটবেলায় কিছুদিন স্কুলে গেলেও পড়াশোনা করা হয়নি শহীদুলের। সংসারের অভাবের কারণে নামতে হয়েছে কাজে। কখনো মজুরি, কখনো ছোটখাটো ব্যবসার ধারাবাহিকতায় রিকশা চালান। এ কাজ থেকে তাঁর মাসিক আয় ১৫ হাজার টাকা। এ আয়ে বাসাভাড়া, খাবার খরচ, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া চালিয়ে ভালোভাবেই সংসার চলতে পারত। তবে প্রায়ই অসুস্থ থাকায় চিকিৎসা করতে হয় বলে স্ত্রীকেও অন্যের বাসায় ঝিয়ের কাজ করতে হয়। এর পরেও সংসারে টানাটানি লেগেই থাকে।
শহীদুল বলেন, ‘মাইকে বলতে শুনি মাস্ক পরা থাকলে করোনা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। তাই গরম লাগলেও সব সময় মাস্ক পরেই রিকশা চালাই। আর গলার গামছাও কোনো স্টাইল না। ঘাম মুছতে সব সময় গলায় ঝুলিয়ে রাখি।’