‘চেয়ে চেয়ে দেখলাম, তুমি চলে গেলে’

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮: ০৩
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯: ১১

প্রতিদিন ভোরে ট্রেনের হুইসেলে ঘুম ভাঙে রাকিব হাসানের। একটু একটু করে গড়ে ওঠা রেলপথ নির্মাণকাজ তাঁর চোখে দেখা। এরপর রেলপথে ট্রেন ছুটে চলা, ট্রেন ছুঁয়ে দেখা—সবই হলো; কিন্তু এখনো হয়নি চড়া। রাকিবের মুখে তাই ভারতীয় সংগীতশিল্পী হৈমন্তী শুক্লার বিখ্যাত গান। ‘আমার বলার কিছু ছিল না, চেয়ে চেয়ে দেখলাম, তুমি চলে গেলে।’ 

শুক্লার কাছে ‘তুমি’ প্রেমিক হলেও রাকিব হাসানের কাছে সেটা নিশ্চিতভাবেই ট্রেন! কারণ, ট্রেন চালুর ২ মাস পেরিয়ে গেলেও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে সরাসরি কোনো ট্রেন যুক্ত হয়নি। ফলে তাঁর মতো চট্টগ্রামের হাজার হাজার মানুষের কক্সবাজার রুটের ট্রেনে চড়া হয়নি! অথচ এই রুটে ট্রেনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে দুটি আন্তনগর ট্রেন চালু করা গেলে মাসে ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা আয় করতে পারত রেলওয়ে। 

গেল বছরের ১১ নভেম্বর দোহাজারী-কক্সবাজার রুট উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের এক মাসের মধ্যে ১ ডিসেম্বর এই রুটে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ নামে ঢাকা থেকে একটি সরাসরি একটি ট্রেন চালু করা হয়। তারপর চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি ‘পর্যটক এক্সপ্রেস’ নামে আরও একটি ট্রেন চালু করা হয়। সেটিও সরাসরি ঢাকা থেকে কক্সবাজারে। এই দুটি ট্রেনে চট্টগ্রাম থেকে টিকিট কেটে যাওয়ার কোনো ‘ব্যবস্থাই’ রাখা হয়নি।

রাকিব হাসানের বাড়ি চট্টগ্রামের দোহাজারী স্টেশনের পাশেই। এই স্টেশন হয়ে ঢাকার দুটি ট্রেন সরাসরি কক্সবাজার যায়। রাকিব পেশায় একজন স্কুলশিক্ষক। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের জায়গার ওপর কক্সবাজার রুটটি তৈরি হয়েছে। অথচ আমার নিজেরও ট্রেনে করে কক্সবাজার যাওয়া হয়নি। এর চেয়ে দুঃখের বিষয় আর কী আছে!’ 

নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রুটে প্রতিদিন শত শত বাস যাত্রী পরিবহন করে। এই রুটে ট্রেনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যে রুটটি চট্টগ্রামের মানুষের জমির ওপর দিয়ে গেছে, সেই রুটে এখনো চট্টগ্রামের মানুষই চড়তে পারেনি। ঢাকা থেকে ট্রেন চালুর পাশাপাশি, চট্টগ্রাম থেকেও অন্তত একটি ট্রেন চালু করতে পারত।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বাণিজ্যিক বিভাগ সূত্র জানায়, বর্তমানে কক্সবাজার রুটে দুটি আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে একটি কক্সবাজার এক্সপ্রেস। এটিতে ৩টি এসি কেবিন, ৫টি এসি চেয়ার, ৬টি শোভন চেয়ার ও ১টি বিশেষ চেয়ার কোচ আছে। এই ট্রেন থেকে যাওয়া-আসা মিলিয়ে রেলওয়ে আয় করে ৪০ লাখ টাকা। ট্রেনটি ঢাকা থেকে রাত সাড়ে ১০টায় কক্সবাজার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। চট্টগ্রামে পৌঁছায় রাত ৩টা ৪০ মিনিটে। কক্সবাজার পৌঁছায় ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে।

একইভাবে আরেকটি ট্রেন হলো পর্যটক এক্সপ্রেস। এটি ঢাকা থেকে সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এটি চট্টগ্রাম পৌঁছায় বেলা ১১টা ২০ মিনিটে। কক্সবাজারে পৌঁছায় বেলা ৩টায়। এই দুটি ট্রেনের টিকিটের এমন চাহিদা, টিকিট বিক্রির ২ ঘণ্টার মধ্যে সব শেষ হয়ে যায়। 

বাণিজ্যিক বিভাগের এক কর্মকর্তা (নাম প্রকাশ করেননি) জানান, চট্টগ্রাম থেকে অন্তত দুটি ট্রেন চালু করা যায়। একটি সকাল ৭টায়, আরেকটি দুপুর বা সন্ধ্যায়। ১৬ বা ১৮ বগির এই দুটি ট্রেন চালু করা গেলে প্রতি ট্রেন থেকে আসা-যাওয়া মিলিয়ে ৯ লাখ। দুটি ট্রেন থেকে প্রতিদিন ১৮ লাখ। মাসে দাঁড়ায় ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। 

পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা তারেক মোহাম্মদ ইমরান বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ট্রেনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অন্তত দুটি ট্রেন চালু করা গেলে রেলওয়ের আয়ের গতি বাড়ত। 

রেলপথমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম বলেন, ‘আমরা ধীরে ধীরে ট্রেনের সংখ্যা বাড়াব। আগামী দুই মাসের মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালু হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত