হোম > পথের কথা

হাতে বানানো গামছা বিক্রি করেন নবুয়ত মিয়া

ফয়সাল পারভেজ, মাগুড়া

‘ভালো সুতোর তৈরি করা গামছা নেবেন, একেবারে দেশি জিনিস, রং ওঠে না, সহজে ছিঁড়ে না। ডাবল, সিঙ্গেল সব পাবেন নবুয়ত মিয়ার গামছা, নিতি চাইলে নিতি পারেন মা বোনেরা।’

শ্রীপুর উপজেলার লাঙ্গলবাঁধের নবুয়ত মিয়া। তিনি গ্রামেগঞ্জে নিজের তৈরি করা গামছা বিক্রি করেন। বয়স তাঁর ৬৫ বছরের কাছাকাছি। স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে তাঁর বসবাস। 

নবুয়ত মিয়া সামনের ডিসেম্বরে এক মেয়ের বিয়ে দিতে চান। তাই মেয়ের বিয়ের খরচ জোগাতে প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে গামছা বিক্রি করেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, নবুয়ত মিয়া মাগুরার নতুন বাজারের সেতুর কাছে বিক্রি করছেন তাঁর নিজের তৈরি গামছা। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কোথাও দশ মিনিট বসে থাকি, সেখানে গামছা বিক্রি না হলে অন্য জায়গায় চলে যাই। এভাবে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে গামছা বিক্রি করি।’

নবুয়ত মিয়া আরও বলেন, ‘আমার বাবা গামছা ও তাঁতের শাড়ি তৈরি করতেন। তাঁদের বাপদাদার ভিটেতে একসময় কাঠ ও লোহার তৈরি তাঁত যন্ত্র ছিল। সবসময় বাড়ি জুড়ে ঘটাস ঘটাস শব্দ হতো। সেখানে পরিবারের সদস্য ছাড়াও প্রতিবেশীরা কাজ করতেন। সেখানে তৈরি করা গামছা ও শাড়ি একসময় চলে যেত ফরিদপুর, রাজবাড়ী, ঝিনাইদহসহ নড়াইল জেলায়।’ 

তবে, এখন সেই পরিবেশ নেই। তাঁত যন্ত্র নষ্ট হতে চলেছে। কাজের মানুষ পাওয়া যায় না। সুতা রং করতে হলে দুজন মানুষ অতিরিক্ত প্রয়োজন। তাদের দিন হিসাবে দিতে হয় ১২০০ টাকা। সুতা শুকানোর পর তা যন্ত্রে উঠিয়ে কাপড় বোনাও খুব সহজ কাজ না। এ ছাড়া ভাঙা মেশিনে বেগ পেতে হয়। তবুও দু-একজন মানুষ দিয়ে কোনোমতে কিছু পারিশ্রমিক দিয়ে গামছা তৈরি করি। গামছা তৈরি করা ছাড়া আমার জীবনে আর কোন পেশা নেই। 

তিনি বলেন, ‘লাঙ্গলবাঁধ এলাকা থেকে ভোরে বাসে শ্রীপুরে গিয়ে গামছা বিক্রি করি। এ ছাড়া শ্রীপুর থেকে মাগুরা জেলা শহরে সপ্তাহে তিন দিন বিক্রি করি। সপ্তাহের বাকিদিনগুলো শ্রীপুরের ইউনিয়নগুলোতে এবং শালিখারর গ্রাম গঞ্জে গামছা বিক্রি করি। এখন গ্রামের মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো না। অনেকে গামছা না কিনে বলেন, ছেঁড়া গামছা দিয়ে আরও কয়েক মাস কাটাব চাচা, তুমি ধান উঠলি তারপর গ্রামে আইসো, কিনবানে একটা গামছা।’ 

নবুয়ত আরও বলেন, ‘বহু কষ্টে ভাই বোনদের মানুষ করেছি। বোনদের বিয়ে দিয়েছি ভালো জায়গায়। সবাই ভালো আছে তয় আমার মত তারা গামছা বানায় না। তাদের সবার অবস্থা ভালো। আমি ওদের মানুষ করতে গিয়ে জীবনে কোন সঞ্চয় করতে পারিনি। তাই এই বয়সেও মেয়ের বিয়ের জন্য ভোরে গামছা বিক্রির জন্য বের হচ্ছি। যদি কিছু গামছা বেশি বিক্রি হয়। 

তবে আমি এ পর্যন্ত কারও কাছে মেয়ের বিয়ের জন্য খরচ চাইনি। তারাও কেউ নিজে থেকে কিছু বলেননি। যাদের নিজের রক্ত পানি করে এই গামছা বানিয়ে মানুষ করলাম। তারা আমার খোঁজ খবর রাখেন না। তারা এখন বড়লোক হয়ে গেছে। তাই ভাইয়ের গামছা বিক্রি করাটা, তারা এখন ভালো চোখে দেখেন না। 

চুম্বকে চলছে শেফালীর জীবিকা

লাগামহীন দ্রব্যমূল্য: কেমন আছেন খেটে খাওয়া মানুষ

দার্জিলিংয়ের সেই গোমড়ামুখো চালক

‘ঘরপোড়া গরু সিঁদুরেমেঘ দেখলেই ডরায়’

 ‘চেয়ে চেয়ে দেখলাম, তুমি চলে গেলে’

বরই বেচে ভাত জোটে না দেলোয়ারের

দুর্গম পাহাড়ি পথে ভরসা বাবুল বড়ুয়া

টিয়া পাখির বাচ্চার প্রাণ বাঁচানো লিয়নকে বাঁচাবে কে

দুই কিডনিই বিকল, মেয়েকে বাঁচাতে প্রবাসী কর্মী মা এখন অটোরিকশা চালক

সত্তরোর্ধ্ব হাসেমের কাঁধে দিনভর আইসক্রিমের বাক্স, তবুও বুড়ো-বুড়ির সংসারে টানাটানি