নজরুল ইসলামের বয়স ৯০ বছর। শরীরে নানা রোগ দেখা দিয়েছে। মাঝেমধ্যে শরীরটা বোঝা মনে হয়। পা চলে না। কোনোমতে টেনে টেনে চলেন। এরপরও পেটের দায়ে ভার বয়ে চলতে হয় তাঁকে। কাঁধে বয়ে বিক্রি করেন ঝাল চানাচুর ও শুঁটকি। গ্রামগঞ্জে ঘুরে স্ত্রীকে নিয়ে কষ্টের জীবন পার করছেন তিনি।
নজরুলের বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সীমান্তঘেঁষা খলিশাকোঠাল গ্রামে। তাঁর এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। সন্তানেরা ব্যস্ত নিজেদের সংসার নিয়ে। কোনো আবাদি জমি নেই নজরুলের। জমি বলতে ১০ শতক, সেখানে জরাজীর্ণ ঘরে স্ত্রীসহ বসবাস। অর্থাভাবে বৈদ্যুতিক সংযোগ নিতে পারেননি। কুপির আলোয় চলে রাতের কাজকর্ম।
সম্প্রতি নজরুলের সঙ্গে উপজেলার গজেরকুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দেখা হয়। বিদ্যালয়ের একটি পরিত্যক্ত ভবনের বারান্দার এক কোনায় বসে ঝাল চানাচুর বিক্রি করছেন তিনি। গায়ে ছেঁড়া গেঞ্জি। পরনে লুঙ্গি। চুল উসকোখুসকো। চানাচুর কিনে খাচ্ছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ এলাকার মানুষ। বিদ্যালয় ছুটির পর ওই এলাকায় ঝাল চানাচুর ও শুঁটকি বিক্রি করেন তিনি। এতে তিনি আয় করেন ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার কপাল খারাপ। ফেরি করে ছেলে-মেয়েকে বড় করেছি। বিয়ে দিয়েছি। এখন তারা পর। নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। শরীরটা বিশ্রাম চায়। কিন্তু পেট মানে না। পেটের তাড়নায় চলতে বাধ্য হচ্ছি। কাজ বন্ধ থাকলে ধার-দেনা করে চলতে হয়।’
নজরুল ইসলামের স্ত্রী মজিরন বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীর যে আয় তাতে জীবন চলে না। এরপর ওষুধ কিনতে হিমশিম খেতে হয়। সরকার আমাদের দুজনকে বয়স্ক ভাতা দিচ্ছেন। তবে একটি পাকা ঘর হলে ভালো হতো।’
খলিশাকোটাল গ্ৰামের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য আব্দুল আলিম বলেন, ‘নজরুল ইসলামের জীবন-যাপন অনেক কষ্টের। তাঁকে সহায়তা দেওয়া অনেক সুখের। তিনি অসুস্থ থাকার পরেও রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করেই গ্রামে গ্রামে চানাচুর বিক্রি করে সংসার চালান। তার সৎ কর্মের জন্য তাঁকে ছালাম জানাই। আমি চেষ্টা করব তাঁরা যেন সরকারি ঘর ও বিদ্যুৎ সংযোগ পান।’
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন দাস জানান, ‘স্বামী-স্ত্রী যেহেতু বয়স্ক ভাতা পান এটা খুবই ভালো। তবে সামনের অর্থ বছরে সরকারি ঘরের বরাদ্দ এলে তাঁদের ঘর দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।’