সাহস মোস্তাফিজ
‘কাসুন্দি দিমু?’ বলতে বলতেই হাতের ধারালো অস্ত্রটি দিয়ে কতবেলের যে অংশটি বোঁটাসমেত গাছে লেগে থাকে, সেই অংশে বাড়ি দিলেন জামাল। নিখুঁতভাবে বসে গেল কতবেলের গায়ে। ফুটো হওয়া অংশটি মোচড় দিয়ে একটু বড় করলেন। ভ্যানের মধ্যে কয়েক শ কতবেল। স্বাদ বাড়াতে মরিচ, লবণের সঙ্গে কাসুন্দিও রেখেছেন। দেখলাম একটা বোতলে চিনিও রেখেছেন। আমি অবশ্য কাসুন্দি দিতে মানা করলাম।
‘অনেকেই কতবেলের লগে চিনি খায়। টক নিবার পারে না। কাসুন্দিটা রাখছি চোখের সৌন্দর্যের লাইগা। স্বাদ তো একেক মানুষের মুখে একেক রকম। তয় যারা কতবেলের ভক্ত, তারা লবণ দিয়া মাখায় খাইতেই বেশি পছন্দ করে। এত আগর-বাগর খায় না।’
কতবেল ঋতুভিত্তিক ফল। আগস্টের দিকে এই ফল পাকে। নভেম্বর নাগাদ শেষ হয়ে যায় কতবেলের মৌসুম। ‘কতবেল শেষ হলে কী বেচবেন?’ জামাল উত্তর দেন—‘ঠিক নাই, সফেদা বেচি, আনারস বেচি, বড়ই বেচি। আবার আমের সিজনে আমও বেচি। ফল-ফ্রুট আর কি।’
এরই মধ্যে স্কুলের পোশাক পরিহিত এক কিশোরী এসে কতবেলের দাম জিজ্ঞেস করল। জামালের ঝটপট উত্তর—‘২০ ট্যাকা, ৩০ ট্যাকা, ৪০ ট্যাকা।’ তিন ক্যাটাগরিতে কতবেল সাজিয়ে রেখেছেন জামাল। কিশোরী বলল, ‘পাকা দেখে দেন। আবার দেইখেন পচা যেন না হয়। কালকেরটা পচা পড়ছিল।’
কথা বলতে বলতে জামাল কতবেলের ভেতর লবণ ভরছিলেন। কিশোরীর আবদার—‘লবণ বাড়ায়ে দেন।’ লবণটা নিজেই তৈরি করেন জামাল। লবণের মধ্যে কয়েক রকম মসলা মাখানো। টকের সঙ্গে একটা ঝাল ঝাল অনুভূতি হয় তাতে।
‘কতবেল খেতে মজা কাঠি দিয়ে। কাঠির গায়ে একটু একটু করে লেগে থাকা কতবেল মুখে পুরতে পুরতে ঘণ্টা পেরিয়ে যায়। এটাই কতবেলের আসল মজা’—বলছিল ওই কিশোরী।
‘শুধু কি মেয়েরাই খায়?’ জামাল বললেন, ‘আরে নাহ! ছেলে-বুড়া সবাই খায়। মেয়েরাই অবশ্য বেশি খায়।’ ততক্ষণে জিভে জলের উপস্থিতি টের পাচ্ছি।