মহিউদ্দিন রানা, ঈশ্বরগঞ্জ ,ময়মনসিংহ
পঁচাত্তর বছর বয়সী আবুল হাসেম কাঁধে কাঠের বাক্সে ধুপধাপ আওয়াজ করতেই ছুটে এল দুই শিশু। একজনের হাতে দুই টাকার একটি কয়েন। অপর শিশুটি হাফপ্যান্টের ভাঁজ থেকে বের করে দিল অল্প চাল। তারা জানে ওই বাক্সে আছে আইসক্রিম। দাম পাঁচ টাকা হলেও শিশুদের আনা ওই সম্বলেই দুজনকে দুটি আইসক্রিম দিয়ে দিলেন আবুল হাসেম।
আজ বুধবার সকালে এই দৃশ্যটি দেখা গেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকার দত্তপাড়া গ্রামে।
কিছু সময় দাঁড়িয়ে দেখা যায়, সেখানে এরই মধ্যে জড়ো হয়ে গেল আরও কিছু শিশু-কিশোরসহ বয়োজ্যেষ্ঠরাও। কারও হাতে চালের কৌটো, আবার কেউ নিয়ে এসেছে ৫-১০ টাকা। আবার এক শিশুর হাতে দেখা যায় কয়েকটা সুপারি। এগুলো দিয়ে তাঁরা হাসেমের কাছ থেকে আইসক্রিম নেবে।
আইসক্রিম বিক্রির ফাঁকে আবুল হাসেমের সঙ্গে কথা হয় আজকের পত্রিকার এ প্রতিনিধির। হাসেম জানান, ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি এই পেশায় আছেন। শীত মৌসুম ছাড়া বছরের বাকি সময় আইসক্রিম বিক্রি করেন। শীতের সময়টাতে এখন বাড়িতেই থাকেন।
বছর তিনেক আগেও শীতকালে বাড়িতে থাকা অবস্থায় তিলের নাড়ু, তিল ও বাদামের তকতি বানিয়ে সেগুলো গ্রামের বিভিন্ন হাটে ঘুরে বিক্রি করতেন। চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় আর সেসব বানান না তিনি। এখন এভাবে আইসক্রিম বিক্রির ওপর নির্ভর করেই চলছে তাঁর জীবন-জীবিকা।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের চর পুবাইল গ্রামের বাসিন্দা আবুল হাসেম কথায় কথায় নিজের বর্তমান সময়ের হতাশার কথা জানালেন। চার ছেলে-মেয়ের বিয়ের পর এখন বাড়িতে তিনি এবং তাঁর স্ত্রী। এই ব্যবসা করে যে আয় হয় তা দিয়েই কষ্টেসৃষ্টে কাটে বুড়ো-বুড়ির দিন।
আক্ষেপ করে আবুল হাসেম বলেন, ‘এই টাকায় তেল নিলে মাছ নিতে পারি না, চাল কিনলে সবজি কিনতে পারি না। শেষ বয়সে এমনেই চলতাছে বুড়া-বুড়ির সংসার! যে কয়ডা দিন বাঁচি আল্লায় চালাইলে এমনেই চলব।’
পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা ওই গ্রামের রাবেয়া খাতুন নামে ষাটোর্ধ্ব এক গৃহিণী বলেন, ‘আমার বিয়ে হয়ে এখানে আসার পর থেকেই দেখছি, এই লোক কাঠের বাক্সতে করে আইসক্রিম বিক্রি করছেন।’
আব্দুল গফুর নামে এক বৃদ্ধ বলেন, ‘মাথাত চুল নাই দেইখ্যা আমরা হেরে তাল্লুয়া ছিলা কইয়ে ডাকতাম। স্বাধীনতার পর থাইক্যা হেরে আইসক্রিম বেচতে দেখতাছি। অহন আমরাও বুড়া হইয়া গেছি, হেও বুড়া হইয়া গেছে।’