Ajker Patrika
হোম > পথের কথা

টাইপরাইটারে একাকার চাষীর জীবন

শিপ্ত বড়ুয়া, রামু (কক্সবাজার) 

টাইপরাইটারে একাকার চাষীর জীবন

আঠারো শ দশকে উদ্ভাবিত লেখার যন্ত্র টাইপরাইটার। সে সময়ে কাগজে ঝকঝকে লেখার জন্য এই যন্ত্র ছিল খুবই জনপ্রিয়। বলা চলে বর্তমান আধুনিক কম্পিউটার কি-বোর্ডের নকশা এসেছে তৎকালীন উদ্ভাবিত টাইপরাইটার যন্ত্র থেকে। প্রায় দুই দশক আগের এই লেখনী যন্ত্র ইতি মধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আধুনিক কম্পিউটার ও ছাপার নতুন সব যন্ত্র এসেছে সাধারণ মানুষের নাগালে। 

কিন্তু কক্সবাজারের আবদুস সবুর চাষী এখনো আঁকড়ে ধরে আছেন আঠারো শ দশকের এই লেখনী যন্ত্রটিকে। কক্সবাজার জজ আদালত প্রাঙ্গণে এখনো তিনি নিয়মিত এই টাইপরাইটার যন্ত্রে লিখে চলেছেন। লালদিঘীর পাড় ইডেন গার্ডেনের নিচতলায় একটি টেবিল নিয়ে তিনি বিভিন্ন ব্যাংকের চালানপত্র, দলিল লিখেন এই টাইপরাইটারে। 

কক্সবাজার জজ আদালতে তিনি চাষী ভাই নামে পরিচিত। বয়স সত্তর ছুঁই ছুঁই হলেও এখনো বদলাতে পারছেন না এই পেশা। সারা দিন মিলে টাইপরাইটারে লিখে সামান্য আয় হয় চাষীর, যা দিয়ে সংসার চলে না। তাহলে কেন তিনি এখনো এই লেখনী যন্ত্রটি আঁকড়ে ধরে আছেন প্রশ্ন ছিল আজকের পত্রিকার। 

আবদুস ছবুর চাষীর টাইপরাইটারআবদুস সবুর চাষী আজকের পত্রিকাকে জানান, ৩৫ বছর ধরে এই টাইপরাইটার যন্ত্রে লিখছেন তিনি, একটা মায়া পড়ে গেছে এই যন্ত্রে। প্রথম দিকে ঢাকা ফার্মগেটে এই লেখনী যন্ত্রে কাজ করতেন। পরে চলে আসেন নিজ জন্মস্থানে। চাষীর গ্রামের বাড়ি ঈদগাও থানার সর্বদক্ষিণে চাষী নগরে। বর্তমানে কক্সবাজার মধ্যম কুতুবদিয়া ফদনার ডেইলে বসবাস করেন। সংসারে আছে চার মেয়ে ও স্ত্রী। নেই কোনো ছেলে সন্তান। 

সংবাদপত্রকে চাষী জানান, ১৯৭৮ সালে দশ হাজার ৫০০ টাকায় ঢাকা থেকে এই টাইপরাইটার কেনেন। কক্সবাজারের রামু থেকে ওস্তাদ মোহাম্মদ হোছাইন থেকে তিনি টাইপরাইটারে লেখা শিখেন। সে সময় টাইপরাইটারে ছিল ইংরেজি অক্ষর। পর্যায়ক্রমে বাংলা এসেছে। 

বর্তমানে টাইপরাইটারে লিখে তিনি ৩০০-৫০০ টাকা আয় করেন। পাশাপাশি নিজের তৈরি কোর্ট ফাইল বিক্রি করেও কিছু টাকা আয় হয় তাঁর। চাষী বলেন, সে সময় আদালতের যাবতীয় কার্যক্রম এই টাইপরাইটারের মাধ্যমে চলতো এবং দৈনিক ১ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হতো। কিন্তু এখন কম্পিউটার আসায় কদর একেবারেই নেই। 

টাইপরাইটার অচল হলে বন্ধ হয় তাঁর আয়। তাই অধীর আগ্রহ নিয়ে টাইপরাইটারের অসুখ সারানোর তীব্র চেষ্টা করছেন আবদুস ছবুর চাষীবৃহস্পতিবার লালদিঘীর পাড় ইডেন গার্ডেনের নিচে আবদুস ছবুরকে দেখা যায় বিমূর্ত হয়ে তিনি তাঁর টাইপরাইটার যন্ত্রটি মেরামত করছেন। মেরামত করতে করতে বলেন, এই মনে হয় পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেল টাইপ রাইটারটি। গতকাল টাইপ রাইটারটি নষ্ট হওয়ার পর থেকে তিনি আর লিখতে পারছেন না। 

কথার ভাঁজে আবদুস চাষী বলেন, সরকারের কাছে আবেদন করব নতুন একটি লেখনী যন্ত্র যাতে আমাকে দেয়। আবদুস ছবুরের জীবন মিশে আছে এই টাইপরাইটারে। এখন অপেক্ষা টাইপ রাইটারের অসুখ সেরে ওঠার। 

চুম্বকে চলছে শেফালীর জীবিকা

লাগামহীন দ্রব্যমূল্য: কেমন আছেন খেটে খাওয়া মানুষ

দার্জিলিংয়ের সেই গোমড়ামুখো চালক

‘ঘরপোড়া গরু সিঁদুরেমেঘ দেখলেই ডরায়’

 ‘চেয়ে চেয়ে দেখলাম, তুমি চলে গেলে’

বরই বেচে ভাত জোটে না দেলোয়ারের

দুর্গম পাহাড়ি পথে ভরসা বাবুল বড়ুয়া

টিয়া পাখির বাচ্চার প্রাণ বাঁচানো লিয়নকে বাঁচাবে কে

দুই কিডনিই বিকল, মেয়েকে বাঁচাতে প্রবাসী কর্মী মা এখন অটোরিকশা চালক

সত্তরোর্ধ্ব হাসেমের কাঁধে দিনভর আইসক্রিমের বাক্স, তবুও বুড়ো-বুড়ির সংসারে টানাটানি