ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে বাবুবাজার ব্রিজের নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে বিষণ্ন কিছু মানুষ। চোখে-মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। এমন বৃষ্টির দিনে, লকডাউনে আপনারা বাইরে কেন? প্রশ্ন শেষ করতেই একজন কান্না চাপতে গিয়ে বুঁজে আসা কণ্ঠে বলে ওঠেন, ঘরে বউ বাচ্চা না খেয়ে বসে আছে; সেই দৃশ্য দেখার জন্য ঘরে যামু?
আচমকা এমন উত্তর শুনে কাছে গেলাম, জানতে চাইলাম কী হয়েছে? জবাবে আরেকজন বলে উঠলেন, ‘কী হয়েছে বুঝেন না? এই যে লকডাউন দিছে, সবকিছু চলাচল বন্ধ করে দিছে, আমাদের সংসার চালানো বন্ধ করার কোনো উপায় আছে? সংসারে তো ঠিকই প্রতিদিন চাল-ডাল, বাজার-সদাই লাগতেছে।’
এই লোকটির নাম আব্দুল মালেক (৫৪)। পরিবারে তিনিই একমাত্র উপার্জনকারী। বয়সের ভারে শরীরে ভাঁজ হয়ে পড়া মালেক ১২ বছর আগে পটুয়াখালী থেকে ঢাকায় এসেছেন। রিকশা–ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান। জানালেন, এক মাস আগে ধার করা টাকা দিয়ে নিজেই একটি ভ্যান কিনেছেন। গত এক মাসে ভ্যানের ঋণ, সংসার চালানোর খরচ মিলে ১৫ হাজার টাকা কর্জ করেছেন। এখন কঠোর লকডাউনে ভ্যান ভাড়া যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে তাঁর প্রশ্ন, ‘কীভাবে দেনার টাকা পরিশোধ করব? কীভাবে সংসার চালাব?'
এসব বলতে বলতেই শব্দ হয়ে উগড়ে বেরিয়ে আসে তাঁর চাপা কান্না। মুহূর্তেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে বলে ওঠেন, ‘আপনার কাছে এসব কইয়া লাভ কী? হয়তো আগামীকাল থেকে এইহানেও আর বসতে পারুম না। পুলিশ এই জায়গাও খালি কইরা দিব।’