হাওয়ার সঙ্গে এই মিঠাই নিমেষে বিলীন হয়ে যায় বলেই এর নাম ‘হাওয়াই মিঠাই’। গ্রামের এই মিঠাই এখন কিছুটা আধুনিক হয়ে শহরেও পৌঁছে গেছে। শিশুদের কাছে জনপ্রিয় অল্প দামের এই খাবার দেখলে অনেক সময় বড়রাও লোভ সামলাতে হিমশিম খায়।
একসময় বিভিন্ন মেলা ও মহল্লার রাস্তায় ফেরিওয়ালারা ‘হাওয়াই মিঠাই’ বিক্রি করতেন। পিতল বা কাঁসার ঘণ্টায় টিংটিং শব্দে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো শিশুদের আকৃষ্ট করতেন। ধান কাটার মৌসুমে এদের আনাগোনা থাকত উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। তবে কালের বিবর্তনে এই গ্রামীণ চিত্র খুব কমই চোখে পড়ে। এরই মাঝে দিনাজপুরের বিরামপুরের পথে পাওয়া গেল হাওয়াই মিঠাই ফেরিওয়ালা শফিকুল ইসলামের সাক্ষাৎ। জমে ওঠে গল্প।
প্রায় আট বছর ধরে ‘হাওয়াই মিঠাই’ বিক্রি করেন শফিকুল ইসলাম। ক্ষেতলাল উপজেলা থেকে বিরামপুরে এসে হাঁটেন পথে পথে। বছরে এভাবে তিন থেকে চার মাস তাঁর ব্যবসা চলে। পাশাপাশি গ্রামে মেলা বসলেও হাজির হন তিনি।
নিজের হাওয়াই মিঠাইয়ের খাদ্যমান নিয়েও বেশ আত্মবিশ্বাসী শফিকুল। বললেন, হাওয়াই মিঠাই বিশুদ্ধ খাবার, ভেজালমুক্ত হওয়ায় শিশুদের জন্যও নিরাপদ। শিশুরা আনন্দসহকারে খায়, আমরাও আনন্দ নিয়ে বিক্রি করি। বড়রাও কেনে, খায়। দিনে ১৫০ থেকে ২০০ হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করতে পারলে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
শফিকুলকে ‘হাওয়াই মিঠাই’ বিক্রি করতে দেখে অনেকেই স্মৃতিকাতর হয়ে ওঠেন, মনে পড়ে ছোটবেলার কথা। এমনই একজন বিরামপুর উপজেলার পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়নের খয়েরপাড়া গ্রামের মামুনুর রশিদ। মামুনুর বলেন, ছোটবেলার সেই ‘হাওয়াই মিঠাই’য়ের স্বাদ এখনো মনে আছে। তাই এখনো গ্রামে ‘হাওয়াই মিঠাই’ কিনে শিশুদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মজা করে খাই। ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে বাজারে গেলে প্রথমেই হাওয়াই মিঠাইয়ের বায়না ধরতাম। মুগ্ধ হয়ে দেখতাম, চিনিকে তাপ দিয়ে গলিয়ে একটি হাতে ঘোরানো ‘জাঁতা’য় পিষে অল্প সময়ে তৈরি হচ্ছে ‘হাওয়াই মিঠাই’। কী মধুরই না ছিল সেই সব দিনগুলি!