মো. গোলাম কবির, ভোলাহাট (চাঁপাইনবাবগঞ্জ)
‘বয়স তখন ১৩। পড়া-লেখার সুযোগ পায়নি। দরিদ্র পরিবারের রুজির (আয়) জন্য বাবার পেশা কামারের কাজে লেগে পড়ি। কিন্তু তেমন আয় না থাকলেও ৬২ বছর বয়সেও আছি বাবার পেশায়।’ এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার মুশরীভূজা গ্রামের মো. রবিউল ইসলাম।
পেশায় রবিউল একজন কামার। কিশোর বয়সে কামারের পেশায় নিয়োজিত হয়ে অর্ধ-শতক পার করেছেন। এই বয়সে এসেও এখনো সেই বাপ-দাদার পেশাতেই আছেন। পেশায় কামার হলেও ছন্দ কবিতা বলায় ভোলাহাট উপজেলার বিভিন্ন ধরনের মানুষ তাঁকে চেনেন। উপজেলার মানুষের কাছে ছন্দ কবি নামেও পরিচিত তিনি। ছন্দে ছন্দে কবিতার মধ্য দিয়ে সারাটা দিন পার হয় তাঁর। বর্তমানে ভোলাহাট মেডিকেল মোড় ফায়ার সার্ভিসের পাশে কামারের কাজ করে সামান্য আয় দিয়ে তাঁর সংসার চলছে।
রবিউল বলছিলেন, ‘বাপ-দাদার কামারের পেশায় কাজ করতে করতে মাজা নুয়ে গেছে। হাতুড়ি দিয়ে আগুনে পোড়ানো লাল শক্ত লোহা পিটিয়ে চলতে চলতে হাঁপিয়ে উঠেছি। তবে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে একমাত্র ছেলেকে রাজশাহীতে রেখে বাংলাদেশ পলিটেকনিকে ইলেক্ট্রনিক্সে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করিয়েছি। এ ছাড়া দুই মেয়েকে এসএসসি পাশ করিয়ে বিয়ে দিয়েছি। নিজে আলোর মুখ দেখতে না পেলেও তিনটি সন্তানকে কিছুটা হলেও সাধ্যমতো পড়িয়েছি।’
কান্না জড়িত কণ্ঠে রবিউল বলছিলেন, গেল মহামারি করোনায় কাজ কর্ম বন্ধ হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হয়েছে। সেই ধকল এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। নিজের অসচ্ছলতার কথা কাউকে সম্মানের ভয়ে বলতে পারি না। সরকার বিভিন্ন মানুষকে করোনার সময় সহযোগিতা করেছে। কিন্তু আমার ভাগ্যে কানা-কড়িও জোটেনি। শুনেছি কামারদের জন্য সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমি কোনো সহযোগিতা পায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা আলি হায়দার বলেন, তিনি ছন্দে ছন্দে বাস্তব পরিস্থিতির ওপর কবিতা তৈরি করে মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন। এলাকায় কামারের চেয়ে ছন্দ কবি হিসেবে ব্যাপক পরিচিত রয়েছে তাঁর।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা মো. রৌশন বলেন, তিনি একজন ভালো মানুষ। তাঁকে ভোলাহাটের সবাই ভালোবাসেন। তাঁর আর্থিক অবস্থা ভালো না হলেও চলাফেরা শিক্ষিত মানুষের মত। তাঁকে সরকারিভাবে-বেসরকারিভাবে আর্থিক সহায়তা করা উচিত।