পেঁয়াজ মসলা নাকি সবজি— এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে ব্যবহারের ভিত্তিতে এটি সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে। সে যা-ই হোক, দেশের বাজারে পেঁয়াজ এখন কেজিতে ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই নিত্যপণ্যের দাম কখনো এত হয়নি।
চলতি বছরের শুরুর দিকে এমন পরিস্থিতি হয়েছিল ফিলিপাইনেও। সেখানে পেঁয়াজের মূল্যস্ফীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে এটিকে মুদ্রার বিকল্প হিসেবে মানুষ ব্যবহার করা শুরু করে। বিয়েতে উপহার হিসেবে পেঁয়াজ দেওয়ার একটি খবর ওই সময় শিরোনাম হয়েছিল। বাংলাদেশও কি সে পথে হাঁটছে? সেটি সময়ই বলে দেবে!
আধুনিককালে চাষাবাদ বেশ সহজ হলেও পেঁয়াজ কিন্তু কখনোই মোটেও ফেলনা জিনিস ছিল না। পেঁয়াজের ইতিহাস বেশ পুরোনো। প্রাচীন মিসরে পেঁয়াজের ধর্মীয় গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। মহা পবিত্র এক খাবার মনে করে অনেকে এর আরাধনাও করতেন। পেঁয়াজ আড়াআড়ি কাটলে যে চক্রগুলো দেখা যায়, মিসরীয়রা মনে করতেন, এটি অনন্ত মহাকালের প্রতিরূপ। এমনকি পরকালে মঙ্গল কামনায় মৃতদেহ সমাধিস্থ করার সময় সঙ্গে পেঁয়াজও দেওয়া হতো।
অনেক ফেরাউনের মমি তৈরির সময় তাঁদের অক্ষিকোটরে পেঁয়াজ রাখা হতো। মিসরীয়দের বিশ্বাস ছিল, পেঁয়াজের তীব্র ঝাঁজযুক্ত ঘ্রাণ মৃতের দেহে প্রাণ ফিরিয়ে আনবে। কথিত আছে, প্রাচীন মিসরে পিরামিডের শ্রমিকদের খাবার হিসেবে বেশি করে পেঁয়াজ খেতে দেওয়া হতো। ধারণা ছিল, পেঁয়াজ খেলে শক্তি বৃদ্ধি পায়।
কামোদ্দীপক হিসেবেও পেঁয়াজের বেশ সুনাম রয়েছে। বেশ কয়েকটি হিন্দু পুরাণে একে কামোদ্দীপক খাবার হিসেবে উল্লেখ করে বিধবাদের পেঁয়াজ খাওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যৌনকামনা তৈরি হতে পারে বলে মিসরে চিরকুমার ধর্মযাজকদের পেঁয়াজ খাওয়া থেকে বিরত থাকার বিধান ছিল।
ফ্রান্সেও একসময় নবদম্পতিকে বিয়ের পরদিন সকালে পেঁয়াজের স্যুপ খেতে দেওয়া হতো।
প্রাচীন গ্রিস ও রোমে ঔষধি গুণের জন্য খাবারে বেশি পেঁয়াজ ব্যবহার করা হতো।