ধরুন গোটা একটি পাহাড় যদি একটি পাথরে তৈরি হয়, কেমন হবে বলুন তো? ভাবছেন এটা আবার সম্ভব নাকি? কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার উলুরু বা আয়ারস পাথরের বেলায় এটাই সত্যি। অনেকেই একে বিবেচনা করে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মনোলিথ বা একশিলা স্তম্ভ হিসেবে। আবার দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আশ্চর্য এই পাথরের রঙেও আসে পরিবর্তন!
এবার উলুরু সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। পাথরটির অবস্থান নর্দার্ন টেরিটরির দক্ষিণ প্রান্তে। এর উচ্চতা কত অনুমান করতে পারেন? আশপাশের মরু এলাকার কথা যদি বিবেচনা করেন, সেখান থেকে এর উচ্চতা ৩৪৮ মিটার বা ১ হাজার ১৪২ ফুট। আর সাগর সমতল থেকে এটা আরও অনেক বেশি, ৮৬৩ মিটার বা ২ হাজার ৮৩১ ফুট।
গোটা পাথরটিকে একটা চক্কর দিতে চাইলে আপনাকে হাঁটতে হবে ৯.৪ কিলোমিটার। কারণ ডিম্বাকার বিশাল এই পাথর ৩.৬ কিলোমিটার লম্বা এবং ২.৪ কিলোমিটার চওড়া। অবশ্য এখন আপনি এটা দেখতে পারলেও এতে চড়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
কিন্তু আশ্চর্য এই পাথরের জন্ম হলো কীভাবে? আনুমানিক ৯০ কোটি বছর আগে প্রক্রিয়াটির শুরু। সে সময় এখন যেখানে অস্ট্রেলিয়া, সেই জায়গা ছিল অগভীর এক সাগর। সাগরের মেঝের নিচে ছিল খনিজ সমৃদ্ধ বেলে পাথরের একের পর এক পরত। মোটামুটি ৫৫ কোটি বছর আগে, ইতিমধ্যে শক্ত হয়ে যাওয়া বেলে পাথরের স্তরগুলো প্রাকৃতিক কারণে ওপরে উঠে এসে জন্ম দেয় পর্বতের।
এই পর্বতগুলোর ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়। এগুলো থেকে তৈরি হয় পলিসমৃদ্ধ কিছু ফ্যান বা খোলা পাখার মতো কাঠামো। এ ধরনের একটি ফ্যান উলুরুর ভিত হিসেবে কাজ করে।
স্থানীয় আদিবাসীরা এই পাথরের খোঁজ জানতেন বহু আগ থেকেই। ১০ হাজার বছর কিংবা এরও আগে থেকে এটি তাঁদের কাছে একটি পবিত্র জায়গা। অন্তত ৫ হাজার বছরের পুরোনো চিত্রকর্মের সন্ধান পাওয়া গেছে এখানে।
মনোলিথটির অবস্থান উলুরু–কাতা তজুতা জাতীয় উদ্যানে। এই ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটটি কিন্তু এনানগু আদিবাসীদের সম্পত্তি। তাঁরা এটি লিজ দিয়েছে অস্ট্রেলীয় সরকারকে।
আগেই বলেছি, উলুরু স্থানীয়দের কাছে পবিত্র এক জায়গা। অনেক পর্যটকই একসময় এখানকার পাথর চুরি করে নিয়ে যেত। তাদের অনেকে আবার এখানকার পাথর নেওয়ার পর নানা ধরনের মন্দ ভাগ্যের শিকার হয়েছে বলে দাবি করে। এর থেকে রেহাই পেতে তারা পার্ক অস্ট্রেলিয়ার রেঞ্জারদের কাছে ডাকযোগে পাঠিয়ে দিত এসব পাথর। আবার অনেক পর্যটক কোনো সমস্যায় না পড়েও নিছক অপরাধবোধের কারণেও পাথর ফিরিয়ে দিতেন। এ ধরনের ফেরত পাওয়া পাথরের নাম রেঞ্জাররা দেন ‘সরি রক’। অবশ্য এখন পাথরটিতে চড়া বারণ হওয়ায় এ ধরনের পাথর চুরি কিংবা ‘সরি রক’ ফেরত দেওয়ার ঘটনাও ঘটে কালেভদ্রে।
তবে পাথরটির আসল রং হচ্ছে ধূসর। এর বিভিন্ন গুহায় মূল রংটার দেখা পাবেন। আবার দিনের বিভিন্ন সময়ে একে আলাদা রঙেও দেখতে পাবেন।
কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব? আসলে এটা আর কিছু নয়, সূর্যরশ্মির খেলা। সূর্য অবস্থান বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে পাথরটিও লাল থেকে বেগুনি, কমলা কিংবা কালো আকারে রূপ নেয়। তারপর আবার আগের রঙে ফিরে আসে। তবে সূর্যাস্তের সময় একে সবচেয়ে সুন্দর দেখায়, তখন সূর্যরশ্মিতে এর রং হয় কমলা–লাল।
কিন্তু এটা কি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাথর? না, ওই রেকর্ডটি পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার মাউন্ট অগাস্টাসের ঝুলিতে। তবে বিভিন্ন ধরনের পাথরের মিশ্রণে তৈরি হওয়ায় সেটাকে মনোলিথ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস, পার্কস অস্ট্রেলিয়া, ট্রি হাগার ডট কম, রিপ্লিস ডট কম