একদল বানরের কথা ভাবুন তো, যারা দিনভর শীতের মধ্যে হটটাবে আয়েশ করে ডোবাডুবি করে বেড়ায়। সত্যি এমন সৌভাগ্যবান বানর আছে। অবশ্য এদের দেখা পেতে আপনাকে যেতে হবে জাপানের নাগানো অঞ্চলে। আর বানরদের এই হটটাবগুলো কিন্তু আকারে বিশাল। কারণ এগুলো আসলে প্রাকৃতিক উষ্ণ প্রস্রবণ।
জিগোকুদানি মাংকি পার্কের অবস্থান জাপানের ইয়ামানোচি শহর থেকে খুব দূরে নয়, ইয়োকইয়ো নামের এক নদীর উপত্যকায়। জাপানি শব্দ জিগোকুদানির বাংলা করলে দাঁড়ায় নরক উপত্যকা। বুদ্বুদ উঠতে থাকা ভীতিকর চেহারার উষ্ণ প্রস্রবণ, দাঁত খিঁচানো পাথুরে পর্বত এবং বরফে মোড়া প্রকৃতি—সব মিলিয়ে জায়গাটির এমন নামকরণ।
শীতের সময় এই বরফরাজ্যে মানিয়ে নিলেও উষ্ণ পানির অভাবটা নিশ্চয় বেশ ভালোভাবেই অনুভব করত বানরেরা। তার পরই আশ্চর্য এক সমাধান পেয়ে গেল। গত শতকের ষাটের দশকের গোড়ার দিকে বুদ্ধিমান এই জীবগুলো প্রাকৃতিক উষ্ণ প্রস্রবণগুলোর খোঁজ পেয়ে যায়, এখানকার জল পরীক্ষা করে বানরের দল যে খুব একচোট নর্তন-কুর্দন করেছিল, তাতে সন্দেহ নেই।
মজার ঘটনা, এই উষ্ণ প্রস্রবণগুলোর কারণে এদিককার ইউদানকা ও শিবু নামের দুটি শহরও পর্যটকদের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
তবে এই বানরদের জীবন সব সময় এত আরামের ছিল না। বেশ ঘাত-প্রতিঘাত। ১৯৫০-এর দশকে নিজেদের আস্তানা ছেড়ে দিতে হয়েছিল স্থানীয় একটি রিসোর্টের কাজের জন্য। ফলাফল হিসেবে কাছের শহরে ওঠে আসে তারা। কিন্তু এখানে মোটেই স্বস্তি মিলল না। স্থানীয় কৃষকদের বাগান থেকে ফল লুটের কারণে তাঁদের চক্ষুশূলে পরিণত হলো। সরকারের কাছে আবেদন করে এদের শিকারের অনুমতিও জোগাড় করে ফেলে কৃষকেরা।
বানরদের এই উষ্ণ জলপ্রীতির পেছনেও একটি গল্প প্রচলিত আছে। খাবারের খোঁজে ওই সরাইখানায় নিয়মিতই যেত বানরগুলো। ওটার পাশেই ছিল একটা উষ্ণ পানির ঝরনা বা উষ্ণ প্রস্রবণ। ১৯৬১ সালের কোনো এক দিনে এর বাষ্প ওঠা জলে নেমে পড়ে কম বয়স্ক এক বানর। তবে সেখানে মজা পেয়ে যাওয়ায় শিগ্গিরই উঠল না। দলের অন্য বানরেরাও এটা দেখছিল। তারপর দলের তরুণ সদস্যরা সেখানে নেমে পড়তে শুরু করল। কয়েক মাসের মধ্যে অন্য বানরেরাও উষ্ণ প্রস্রবণে গোসল শুরু করল। ক্রমেই কাছে-দূরের অন্য উষ্ণ প্রস্রবণগুলোতেও গোসল করতে শুরু করল।
বছরভর ওখানে যাওয়া গেলেও তুষারছোঁয়া পাহাড় এবং বানরকূলের স্পা দর্শনের জন্য শীতই ভ্রমণের আদর্শ সময়। এখন অবশ্য মোটামুটি বছরজুড়েই তুষারবানরদের আনাগোনা থাকে গরম জলের পুকুরগুলোয়। তবে শীতের সময়টায় ওখানে রীতিমতো আস্তানা গেড়ে বসে। সাধরণত দিনভর উষ্ণ প্রস্রবণে সময় কাটিয়ে সন্ধ্যার দিকে আবার পাহাড়ের জঙ্গলের আস্তানায় ফিরে যায়। পার্কে এদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কর্মচারীও থাকেন।
সূত্র: সিএনএন, অ্যামিউজিং প্ল্যানেট, জাপান গাইড ডট কম