কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ। যেখানে টাকাপয়সা, সোনা-রুপা, বৈদেশিক মুদ্রার পাশাপাশিও অনেক ধরনের ফরিয়াদের চিঠিও পাওয়া যায়। এবার পাওয়া গেল এক বস্তা চিঠি। এসব চিঠির বিষয়বস্তু এখন আলোচনার কেন্দ্র। মনের বাসনা পূরণের জন্য ফরিয়াদ করে চিঠি লিখেছেন অনেকে।
গতকাল শনিবার সকাল ৭টায় তিন মাস ১৪ দিন পর কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের ১০টি দানবাক্স (সিন্দুক) ও একটি ট্রাংক খোলা হয়। দানবাক্স থেকে মেলে ২৯ বস্তা টাকা। দিনভর গণনার পর দানবাক্স থেকে পাওয়া গেছে মোট ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা। সঙ্গে এক বস্তা চিঠিও।
জানা গেছে, অনেক আগে থেকেই আল্লাহকে উদ্দেশ্য করে পাগলা মসজিদের দানবাক্সে চিঠি দেন ভক্তরা। এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। নাম–পরিচয় উল্লেখ না করা ওই চিঠিগুলোতে প্রেরকেরা তাঁদের ফরিয়াদের কথা লেখেন। ইতিমধ্যে এসব চিঠি ঘুরে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও।
বস্তাভর্তি চিঠির মধ্যে একটিতে মনের মানুষকে কাছে পাওয়ার অসমাপ্ত কাহিনি লেখা পাওয়া যায়। এতে লেখা রয়েছে, ‘প্রিয় খাদিজা আক্তার লিপি, আজ এই ঐতিহাসিক মসজিদে তোমার নামে একটা মানত পূর্ণ করলাম। তুমি নেই তো কী হয়েছে, তোমার দেওয়া স্মৃতি নিয়ে বাঁচব আজীবন। আমার কী দোষ ছিল? তুমি একটি ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার পরও আমাকে নষ্ট করলে। আমি তোমাকে অভিশাপ দেব না। আমি আশা রাখি, তুমি একসময় আমার হবে। যদিও তুমি বাচ্চার মা হও আমার কোনো আফসোস থাকবে না।’
সৌদি আরবের এক পুরুষকে ভালোবাসার কথা জানিয়ে এক নারী লিখেছেন, ‘আমি একজন সৌদিয়ানকে ভালোবাসি। হে মহান আল্লাহ, তুমি তাকে আমার করে দাও। আমি যেন তাকে বিবাহ করতে পারি (সুম্মা আমিন)। হে আমার রব, তুমি আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিও না। হে রব, তুমি আমাকে নবীর দেশে পবিত্র মাটিতে জন্ম গ্রহণ করার সৌভাগ্য দিয়েছ। আমি যেন আমার সেই সৌভাগ্য নিয়ে তোমার পবিত্র মাটিতে মৃত্যুবরণ করিতে পারি।’
চিঠিটিতে হালাল রোজগার কারার কথাও উল্লেখ করা হয়। শেষে লেখা হয়, ‘যে আমার চিঠিখানা পড়িয়াছেন, আমাদের জন্য দোয়া করবেন, নেক আশা করিয়া চিঠিখানা লিখেছি।’
কিশোরগঞ্জ সদরের এক পুরুষ নিজের নাম সংক্ষেপে ‘এম’ উল্লেখ করে বাজিতপুরের এক তরুণীর নাম ‘টি’ উল্লেখ করে চিঠি লিখেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আল্লাহ আমি তোমার এক বান্দিকে আমার জীবনের থেকে বেশি ভালোবেসে ফেলেছি। আল্লাহ, আমি তাকে সঙ্গে নিয়ে তোমার এবাদত করতে চাই। সে যদি আমার নসিবে থাকে, তাহলে তোমার রহমতের দ্বারা তাকে আমার সঙ্গে মিলিয়ে দাও। সে যদি আমার নসিবে নাও থাকে, তাহলে তুমি তাকে আমার নসিব করে দাও। আল্লাহ তুমি তো সবার মন পড়তে পারো, তুমি ওর মনে আমার জন্য ভালোবাসা সৃষ্টি করে দাও। আল্লাহ, তুমি তাকে আমার সহধর্মিণী করে দাও। আল্লাহ, তোমার পরে যদি কাউকে ভালোবেসে থাকি, তাহলে সেটা ওকে।’
পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত উদ্দীন ভূঞা বলেন, ‘কথিত আছে, খাস নিয়তে এ মসজিদে দান ও ফরিয়াদ করলে মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়। সে জন্য দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ এখানে এসে দান করেন। এবার দানবাক্সগুলোতে টাকার পাশাপাশি এক বস্তা চিঠিও পাওয়া গেছে। চিঠিগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ফরিয়াদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবারই সিন্দুক খোলার সময় অনেক চিঠি পাওয়া যায়। তবে অন্যবারের তুলনায় এবার সংখ্যাটা বেশি। ২৯ বস্তা টাকার সঙ্গে প্রায় এক বস্তা চিঠি পাওয়া গেছে। এমনিতেই সিন্দুক ঠাসাঠাসি থাকে, এসব চিঠির কারণে জায়গা হয় না। অনেকে সিন্দুকে টাকা দিতে পারেন না।’
টাকা ও চিঠি ছাড়াও পাগলা মসজিদের সিন্দুকে স্বর্ণালংকার ও বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া অনেকে তাঁর মুরগির দেওয়া প্রথম ডিম, গাছের প্রথম লাউ, প্রথম নারিকেল, মরিচ, মুরগি-গরু-ছাগলসহ নানা কিছু পাগলা মসজিদে দান করেন।