জমি চাষের সঙ্গে গরু ও মহিষের সম্পর্ক বহু পুরোনো। কৃষকের বড় পরিচয় ছিল, যার বাড়িতে গরু, লাঙল ও জোয়াল, তিনিই কৃষক। আগে সাধারণত কৃষিজমিতে গরু দিয়ে টানা লাঙলে জমি চাষ ও মই দিয়ে চাষের জমি সমান করে ফসল ফলানো ছিল একটি সাধারণ চিত্র। তবে আধুনিক যুগে এসে কৃষিতে যুক্ত হয়েছে ইঞ্জিনচালিত কলের লাঙল ও ট্রাক্টর।
অন্যদিকে কৃষিতে হালের গরুর ব্যবহার কমে যাওয়া এবং অনেক কৃষকের গরু ও কলের লাঙল ব্যবহারের সুযোগ না থাকায় নিজেরাই টানছেন মই। এসব কারণে কৃষিকাজে গরুর ব্যবহার দিন দিন কমে আসছে।
সম্প্রতি সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটার শাকদহ বিলে দেখা গেছে, এক কৃষক তাঁর ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে মই টানছেন।
কথা হয় বোরো খেতে মই টানতে থাকা পাটকেলঘাটার আমতলাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আজিবর সরদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘জমি চাষাবাদ করে ছয় সদস্যের পরিবারের সংসারের সারা বছরের জোগান দিতে হয়। কিন্তু এলাকায় ইরি-বোরো চাষ ছাড়া অন্য ফসল তেমন না হওয়ায় হালের গরু পালন করা হয় না। আগে আমারও হালের বলদ ছিল। সারা বছর গরু পালন করতে যে টাকা খরচ হয়, তা দিয়ে আমাদের মতো কৃষকের গরু পোষা সম্ভব নয়। বর্তমানে আমার হালের বলদ না থাকায় সকাল থেকে বাবা-ছেলে মিলে খেতে মই টানছি।’
জুজখোলা গ্রামের কৃষক ইসমাইল হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি ইরি ধান চাষ করে আসছেন। এবারও তিনি তিন বিঘা জমিতে ধান চাষ করবেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এলাকায় হালের বলদ অমিল হওয়ায় নিজেরা খেতের মই টানছি।’
তৈলকুপি গ্রামের কৃষক আব্দুর সবুর বলেন, আগে হাল চাষের জন্য প্রত্যেক কৃষকের ঘরে গরু, লাঙল ও মই থাকত। আধুনিকতার ছোঁয়া এখন গ্রামাঞ্চলেও থেমে নেই। আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহারে গরুর টানা লাঙল, মই এখন পাটকেলঘাটায় তেমন একটা চোখে পড়ে না।
তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা বেগম বলেন, ‘আধুনিকতার ছোঁয়ায় গরুর লাঙলের চাষ অনেকটা কমে গেছে। যে কারণে কৃষক বিকল্প উপায়ে চাষাবাদ করছেন।’