আব্দুল মাজেদের বয়স এখন ৭২ বছর। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ২২ পেরোনো টগবগে যুবক। চাকরি করতেন তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের মুজাহিদ বাহিনীতে। দেশ স্বাধীন করতে চাকরি ছেড়ে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। ১৭ ঘণ্টার এক সম্মুখযুদ্ধে চারটি গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়েছিলেন তিনি। বেঁচে যান ভাগ্যক্রমে। ২২ দিন হাসপাতালে কাটিয়ে আবার ফেরেন রণাঙ্গনে।
মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে যুদ্ধদিনের সেই সব গল্প শুনিয়েছেন সাতক্ষীরার কলারোয়ার বাকসা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মাজেদ। তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালের বৈশাখ মাস। কলারোয়া থেকে আমরা ২৮ জনের একটি দল ভারতের ঘোজাডাঙ্গায় গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে নাম লেখাই। মুজাহিদ বাহিনী থেকে ট্রেনিং নেওয়া থাকলেও আবারও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া সব সদস্যের সঙ্গে অস্ত্র ও আত্মরক্ষার ট্রেনিং নিলাম।’
আব্দুল মাজেদ বলেন, বৈশাখ মাসের শেষের দিকে ঘোজাডাঙ্গায় পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধ চলে একটানা ১৭ ঘণ্টা। এতে দুই শতাধিক খান সেনা নিহত হয়। যুদ্ধের একপর্যায়ে হানাদারদের ছোড়া চারটি বুলেট আমার পিঠে, পায়ে ও কোমরে বিদ্ধ হয়। জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। আমার সঙ্গে থাকা দুই সহযোদ্ধা শহীদ হন। দুই দিন পর আমার জ্ঞান ফিরলে দেখি ভারতের বদরতলা হাসপাতালের বারান্দায় শুয়ে আছি। ২২ দিন পর চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হলে আবারও ঘোজাডাঙ্গাসহ কয়েকটি যুদ্ধে অংশ নিই। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল দেবহাটার কুলিয়া ব্রিজ ধ্বংসের চেষ্টা।
৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে সাতক্ষীরার সব থেকে দুঃখজনক ঘটনা ছিল শ্রাবণ মাসের। এ তথ্য জানিয়ে আব্দুল মাজেদ বলেন, সদরের ঝাউডাঙ্গা বলফিল্ডে আশ্রয় নেওয়া ৬৪ গ্রামের শরণার্থীদের প্রকাশ্যে পাকিস্তানি হানাদারদের দিয়ে হত্যা করিয়েছিলেন রাজাকার মতিয়ার রহমান মতি।
মতিকে আটকের কাহিনিও শোনালেন আব্দুল মাজেদ। তিনি বলেন, ‘রাজাকার মতি ও পাকিস্তানি সেনাদের হটাতে মুক্তিযোদ্ধারা পরিকল্পনা করেন। হালকা মেশিন গান কাছে নিয়ে ছদ্মবেশ ধরেন পুঁইশাকের ব্যবসায়ীর। এরপর কয়েক সপ্তাহের চেষ্টায় ঝাউডাঙ্গা পাথরঘাটা এলাকার এক ব্যক্তির গোয়াল ঘর থেকে আটক করা হয় তাঁকে। পরে মুখে গামছা বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় তাঁকে। এভাবে এলাকা থেকে অত্যাচারী পাকিস্তানি হানাদার ও রাজাকারদের তাড়িয়েছিলাম।’