মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে সড়ক ও পানি—দুই জায়গাতেই চলার নৌকা তৈরি করে আলোচনায় এসেছিলেন লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার মো. ইউসুফ মিস্ত্রি। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন হিসেবে গত বছরের ১৭ মার্চ নৌকাটি প্রধানমন্ত্রীর হাতে হস্তান্তর করার স্বপ্ন ছিল তাঁর। সেই স্বপ্ন পূরণ না হওয়া ও আর্থিক সংকটের কারণে নৌকাটি বিক্রি করে দেবেন বলে জানিয়েছেন ইউসুফ।
নৌকার মিস্ত্রি ইউসুফ উপজেলার চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের পূর্ব চর কলাকোপা গ্রামের বাসিন্দা। দৈনিক ভিত্তিতে তিনি নৌকা তৈরি করেন। টানা তিন বছর রাতজাগা শ্রমে তৈরি নৌকাটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি ভালোবাসা থেকে নাম দেন ‘জল-ডাঙা মুজিব পরিবহন’।
তাঁর পরিবার সূত্রে জানা যায়, তিন বছর অক্লান্ত পরিশ্রমে নৌকাটি তৈরি করেছেন ইউসুফ। ২০১৯ সালে কাজ শুরু করে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে নৌকাটি তৈরি করতে। দিনে অন্যের নৌকা তৈরিতে মিস্ত্রির কাজ করতেন। আর রাতে নিজেদের স্বপ্নের নৌকা তৈরির কাজ করতেন তাঁরা। এই কাজে মো. করিম ও মো. আলাউদ্দিন তাঁকে সহযোগিতা করেন।
সরেজমিন দেখা যায়, উভচর নৌকাটিতে গাড়ির মতো গিয়ার, হেড লাইট, ইন্ডিকেটর, ফ্যান, মিটার, হর্ন আছে। আবার নদীতে চলার জন্য পেছনে দুটি পাখা রয়েছে। এতে ২৪ জন যাত্রী বসাতে পারবেন। নৌকাতে উঠতে কাঠের সিঁড়ি ছাড়াও জানালা আছে।
এলাকাবাসী জানান, দরিদ্র হওয়া সত্ত্বেও স্বপ্ন ও আন্তরিক চেষ্টায় নৌকাটি তৈরি সম্ভব হয়েছে। কিন্তু তাঁদের স্বপ্ন আজও বাস্তবায়ন হয়নি। তাই নৌকাটি বিক্রি করতে চাইছেন।
ইউসুফের বাবা আবুল কালাম বলেন, ‘গত বছরের ১৫ মার্চ স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনীতিকদের উপস্থিতিতে নৌকাটি উদ্বোধন করার কথা থাকলেও তা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী যদি আমার ছেলের তৈরি করা নৌকায় একটু উঠতেন, তাহলেই ছেলের অক্লান্ত পরিশ্রম সার্থক হতো। আমরা অনেক শান্তি পেতাম।’
ইউসুফ মিস্ত্রি বলেন, ‘সর্বপ্রথম আমার বাবা ৫০ হাজার টাকা হাতে তুলে দিয়ে নৌকা তৈরির জন্য অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। পাশাপাশি স্ত্রীর উৎসাহ ও সহযোগিতা কাজে আগ্রহ জাগিয়েছে। বাবার স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও আওয়ামী লীগের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশের ক্ষুদ্র প্রয়াস এটি। নৌকাটি প্রধানমন্ত্রীর হাতে হস্তান্তর করার স্বপ্ন থাকলেও অনেক চেষ্টা করে তা পারিনি। উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো নেতা এ বিষয়ে সহযোগিতাও করেননি। স্বপ্ন পূরণ না হওয়া ও আর্থিক সংকটের কারণে নৌকাটি এখন বিক্রি করে দেব।’