শিপুল ইসলাম, রংপুর
বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল-অবরোধে যাত্রী না থাকায় বন্ধ ছিল রংপুরের আন্তজেলা ও দূরপাল্লার বাস। পরিবহনমালিক ও শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, এতে এই অঞ্চলের প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এ ছাড়া আয়হীন হয়ে পড়েন কয়েক হাজার মোটরশ্রমিক। পাশাপাশি সীমাহীন দুর্ভোগে ছিলেন অফিসগামী সাধারণ মানুষেরা।
জেলা মোটর মালিক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি এ কে চৌধুরী ক্যাপ্টেন বলেন, রংপুর থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন ১০০ বাস যাতায়াত করে। আর রংপুর বিভাগের মধ্যে চলে আরও ১৮১টি বাস। কয়েক দিন ধরে এগুলো বন্ধ থাকায় রংপুর জেলা মোটরমালিকদের প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এ ধরনের কর্মসূচি বাড়লে লোকসান আরও বাড়বে।
বিএনপি-জামায়াত প্রথম দফায় গত ৩০ অক্টোবর সারা দেশে হরতালের ডাক দেয়। পরদিন থেকে টানা তিন দিন অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়। দুদিন বিরতি দিয়ে ফের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি দেয় তারা। এক দিন বিরতি দিয়ে কাল বুধবার থেকে আবার ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বিএনপি।
গতকাল সোমবার সকালে রংপুর নগরী ঘুরে দেখা গেছে, কোনো বাস চলাচল করছে না। তবে বিকেলে কিছু বাস চলেছে। এদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরীতে তেমন লোকসমাগম ছিল না।
রংপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে কথা হয় পরিবহনশ্রমিক রুবেলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যেদিন হরতাল দিছে, সেদিন থেকে গাড়ি বন্ধ। মাঝে দুই দিন গাড়ি চলছে। আবার অবরোধ দিছে। গাড়িও বন্ধ। গাড়ি বন্ধ থাকলে তো আমাদের ইনকাম বন্ধ। এমনে চললে আমরা চলব কী করে? পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।’
পরিবহনশ্রমিক আমিন আলী বলেন, গাড়ির চাকা ঘুরলে তবেই সংসার খরচের টাকা হয়। জিনিসপত্রের যে দাম, কয়েক দিন ধরে খুব কষ্টে সংসার চলছে। তিনি বলেন, ‘যে অবরোধ প্যাটের ভাত কাড়ি নেয়, তাক দিয়া লাভ কী কন?’
রংপুর থেকে ঢাকাগামী বাসগুলো কামারপাড়া স্ট্যান্ডে থাকে। সেগুলো ধুয়ে পরিবারের খরচ জোগান শাহীপাড়ার সজিব রহমান। কিন্তু হরতাল-অবরোধে গাড়ি বন্ধ থাকায় তাঁর আয়ের পথও বন্ধ। ঋণ করে সংসার চালাচ্ছেন। সজিব বলেন, ‘গাড়ি ধুয়ে দিয়ে প্রতিদিন যা পাই, তা দিয়ে বউ-বাচ্চা নিয়ে খাই। এখন তো কয়েক দিন থেকে বাস বন্ধ। সংসার খরচ চালাতে দেনাত পড়ছি। আরও কয়েক দিন এমন থাকলে না খায়া মরির নাগবে।’
বাসচালক মোকলেছ বলেন, ‘বাসমালিকেরা তো বলে বাস বের করতে। কিন্তু রাস্তায় বের হলে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে তো আমাদের দেখার মানুষ থাকবে না। বাসমালিক তো নতুন আরেকটা বাস পাবেন, কিন্তু আমাদের কী হবে?’
সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে আর যেন বাস বন্ধের কর্মসূচি না দেওয়া হয়—এমন আহ্বান জানিয়ে এইচএ পরিবহনের চালক আজিজ মিয়া বলেন, ‘গাড়ি চললে টাকা পাই, না চললে টাকা পাই না। এ রকম কর্মসূচি বেশি দিন চলতে থাকলেও কয়েক হাজার মানুষের সংসার চালাতে কষ্ট হবে। সাধারণ মানুষ ও শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে এমন কর্মসূচি না দেওয়ার আহ্বান জানাই।’