সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে সাড়ে ৬ কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার চিঠি দেওয়ার পরও কাজ শুরু করা হচ্ছে না।
জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারিতে এনায়েতপুরের খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ (কেওয়াইএএমসি) হাসপাতাল থেকে শাহজাদপুর উপজেলার পাঁচিল পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। টেন্ডারপ্রক্রিয়া শেষে ১৭টি প্যাকেজে গত মার্চ থেকে কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে যমুনায় পানি বাড়তে থাকায় জুন থেকে কাজ বন্ধ রাখা হয়।
এলাকাবাসী বলছেন, কাজ শুরু হওয়ার মাঝপথে চলে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যে কারণে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। আর ঠিকাদার বলছেন, নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে কাজ সাময়িক বন্ধ ছিল। চলতি মাসের শেষ দিকে কাজ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এদিকে যমুনায় পানি বাড়ায় গত জুনের প্রথম সপ্তাহে সিরাজগঞ্জে বন্যার সতর্কবার্তা জারি করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পরে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে নদীর চরাঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। চলতি বছরে যমুনায় কয়েক দফা পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার কাজীপুর, সদর, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। এতে তিন শতাধিক বসতবাড়ি, ফসলি জমি, স্কুল-মাদ্রাসা, মসজিদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বিশেষ করে শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর ও এনায়েতপুরে ভাঙনের ভয়াবহতা বেশি দেখা দেয়। নদীভাঙনের জন্য এসব এলাকার মানুষের দাবি, সঠিক সময়ে বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু না করায় নদীভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করে।
জালালপুর এলাকার আব্দুস সালাম বলেন, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এই এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা। কাজ শুরু হওয়ার মাঝপথে চলে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যে কারণে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে।
জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মহির উদ্দিন বলেন, চলতি বছরে সবচেয়ে বেশি নদীভাঙন হয়েছে জালালপুর এলাকায়। গুচ্ছগ্রামসহ তিন শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয়নি।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রণজিত কুমার সরকার বলেন, চলতি বছরের মার্চ মাসে এনায়েতপুরে সাড়ে ৬ কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু হয়। কিন্তু জুন মাসের শুরুতে যমুনা নদীতে পানি বাড়ায় কাজ বন্ধ রাখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজ শুরু করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
রণজিত কুমার সরকার আরও বলেন, আশা করা যাচ্ছে চলতি মাসেই কাজ শুরু হবে এবং আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করা যাবে।
এনায়েতপুরে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কর্মকর্তা ও সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বেলকুচি-চৌহালী অঞ্চল) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মিলটন হোসেন বলেন, এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে শাহজাদপুর উপজেলার পাচিল পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত তারা কাজ শুরু করেনি।
১১ নম্বর প্যাকেজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এআরসি কনস্ট্রাকশনের ম্যানেজার আকরাম হোসেন বলেন, ‘এনায়েতপুরে বাঁধের কাজ শুরু করার জন্য আমাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। কাজের জন্য ইতিমধ্যে জমি নেওয়া হয়েছে। পাথর নিয়ে একটু ঝামেলা ছিল। পাথরের দাম বেড়েছে। সেই ঝামেলা শেষ হয়েছে। নদীতে বালুর বস্তা ফেলার কাজ শেষ হয়েছে। পাথর আসলে ব্লক তৈরি করে নদীর তীরে বসানো হবে। চলতি মাসের শেষ দিকে কাজ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে কাজ সাময়িক বন্ধ ছিল।’