নির্বাচনী ডামাডোলের মধ্যেও বরিশালে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে রাজনৈতিক রেষারেষি রয়ে গেছে। দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকে কেন্দ্র করে গত শুক্রবারের জনসভায় এই চিত্র ফুটে ওঠে। সমাবেশে হাসানাত-সাদিক আর খোকন-জাহিদ অনুসারীরা পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিয়েছেন। দুপক্ষই দাবি করেছে, জনসভায় তাঁদের কর্মী বেশি ছিল। তবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের শেষ মুহূর্তে এই আসনের নৌকার প্রার্থী জাহিদ ফারুকের ভূয়সী প্রশংসা করায় পাল্টে গেছে রাজনীতির চিত্র।
জানা গেছে, চাচা-ভাতিজার দ্বন্দ্বের জেরে জনসভার কয়েক দিন আগেই নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর মঞ্চে ওঠা নিয়ে আপত্তি ওঠে। কিন্তু শুক্রবারের জনসভা মঞ্চে প্রথম সারিতেই বসেছিলেন সাদিক। মঞ্চ এবং মাঠেও একচেটিয়া কর্তৃত্ব দেখান সাদিক অনুসারীরা। জনসভায় সাবেক মেয়র সাদিক যখন বক্তব্য দেন, তখন করতালিতে ফেটে পড়েন নেতা-কর্মীরা। অন্যদিকে ওবায়দুল কাদেরের আগে মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত বক্তব্য দিতে গেলে পাল্টা জবাবে নেতা-কর্মীরা স্লোগানে মুখর করেন তোলেন জনসভাস্থল।
এদিন বিকেল সোয়া ৪টায় বক্তব্য শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তাঁর বাম পাশে ছিলেন বরিশাল-৫ (নগর ও সদর) আসনের নৌকার প্রার্থী প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এবং মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। ডান পাশে ছিলেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি এবং তাঁর ছেলে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। প্রধানমন্ত্রী ২৫ মিনিট বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘বরিশালে আমি জাহিদ ফারুককে মনোনয়ন দিয়েছি। আপনারা জানেন, তাঁকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছিলাম। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে, সততার সঙ্গে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। সততার সঙ্গে যে লোকটা কাজ করেছেন, তাঁকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।’ এ সময় পাশে দাঁড়ানো মেয়র খোকন প্রতিমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসেন। তবে নিশ্চুপ ছিলেন হাসানাত এবং সাদিক।
প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে পাল্টে গেছে বরিশালে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। জাহিদ ফারুক ও মেয়র খোকন অনুসারীরা মনে করেন, এ জনসভায় তাঁরা সফল। অন্যদিকে সাদিক অনুসারীরা এখন শেষ আশায় চেয়ে রয়েছেন, ২ জানুয়ারি উচ্চ আদালতে শুনানিতে মনোনয়ন ফিরে পাবেন সাদিক আবদুল্লাহ। এদিকে গতকাল শনিবার দিনভর চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বত্র আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষের মুখে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় বয়ে যায়।
নগরের ২৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান নাসিম বলেন, নেত্রী যা বলে গেছেন, তাতে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত। নেত্রীর বক্তব্যেই ঘুরে গেছে বরিশালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। দিন শেষে মেয়র খোকন আর প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক রাজনৈতিকভাবে সফল হলেন। মঞ্চে থাকা সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলার সাধারণ সম্পাদক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, জনসভায় নৌকার প্রার্থীর অবস্থান স্পষ্ট হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে যে বিভ্রান্তি ছিল, তা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে দূর হলো।
তবে সাদিক অনুসারী নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘নেত্রী মাঠ দেখে বুঝেছেন, হাসানাত ভাই এবং সাদিকের এই শ্রম সার্থক হয়েছে। আমরা রাজনৈতিক দিক দিয়ে সফল। আমাদের দখলে ছিল মাঠ। জনসভার মধ্য দিয়ে বিএনপি-জামায়াতও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা দেখে চিন্তায় পড়েছে।’ তিনি আশা করেন, আগামী ২ জানুয়ারি সাদিক আদালতের আদেশে মনোনয়ন ফিরে পাবেন এবং পুরোদমে মাঠে নামবেন।
এ প্রসঙ্গে জাহিদ ফারুকের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মীর আমিন উদ্দিন মোহন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় প্রার্থী জাহিদ ফারুক যা অর্জন করলেন, তাতে নৌকাকে ঠেকানো আর সম্ভব নয়। রাজনৈতিকভাবে বল আমাদের মাঠে। মেয়র খোকন এই মাঠ তৈরির প্রধান কারিগর। যাঁরা রাজনীতিবিমুখ ছিলেন তাঁরা এখন খুশি। আমার মনে হয় না ঈগল আর আকাশে উড়বে। মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ নেতাদেরও সরতে হবে বরিশালের রাজনীতি থেকে।’
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর আগমনে দক্ষিণের মানুষের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে। জনসভায়ও এর প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি দক্ষিণাঞ্চলবাসীকে ৬ লেনের সড়ক করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ভবিষ্যতে ভোলার গ্যাস বরিশালে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমরা এ জনসভায় রাজনৈতিকভাবে সন্তুষ্ট। নির্বাচনে এর প্রতিফলন ঘটবে।’