উনিশ শতকে যেসব উপন্যাস লেখার কাজ শুরু হয়েছিল তা ক্রমেই এগিয়ে যেতে থাকবে। খবরের কাগজ এবং পত্রপত্রিকাগুলো তাকে প্রয়োজনীয় জায়গা দিয়েছে, উপন্যাসকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশও করে গেছে যখন সেসবের খ্যাতি তুঙ্গে ছিল। সেই উপন্যাসের প্রথম দিককার কাজগুলো দ্রুত হয়ে গেছে। পরবর্তী লেখার কাজটি হচ্ছে এখন, উপসংহার কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বা পরিণতি কী হবে তা এখনই ধারণা করা সম্ভব নয়। শুধু সস্তা গল্প বা গ্যাদগেদে আবেগের কাহিনিই যে কেবল পাঠককে বছরের পর বছর ধরে রাখতে পারে, এমনটা আদৌ নয়। ডিকেন্সের অনেক উপন্যাস ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল কিস্তিতে কিস্তিতে। লেভ তলস্তয়ের ‘আনা কারেনিনা’ও ধারাবাহিকভাবে বেরোয় দীর্ঘদিন ধরে। ফন্তানার প্রায় সব উপন্যাসই প্রথমে পত্রপত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে।
আমার এই বক্তৃতার বাঁকবদল করার আগে বা অন্য বিষয়ে ঝুঁকে পড়ার আগে একেবারে নিখাদ সাহিত্যের দৃষ্টিকোণ থেকে একটি কথা স্পষ্ট করে বলে নিতে চাই। সুইডিশ একাডেমি আজ এই হলে আমাকে আমন্ত্রণ করার বিষয়টি যেন আমার কাছে চরম বিস্ময়কর। ‘দ্য র্যাট’ নামে আমার উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে। গবেষণাগারের একটি ইঁদুর সম্পর্কে দীর্ঘ প্রশস্তি তুলে ধরা হয়েছিল সেখানে।
সেই ইঁদুরটিকেই তো আসলে আজ নোবেল পুরস্কার দেওয়া হলো। সে বেশ কিছু বছর ধরে তালিকায় ছিল। গবেষণার জন্য ব্যবহৃত লাখ লাখ জন্তু—গিনিপিগ থেকে লাল বাঁদর, লাল চোখের ইঁদুরদের প্রতিনিধি হয়ে সে-ই শেষ পর্যন্ত বাকিদের প্রাপ্য বুঝে নিল।
মানুষ চিরকালই গল্প বলে এসেছে। মানবজাতি লিখতে শেখার অনেক অনেক আগে থেকেই একে অন্যকে গল্প বলে এসেছে এবং সবাই অন্যের গল্প শুনেছে মন দিয়ে।এমনটাও তো দেখা গেছে, নিরক্ষর মানুষেরা অন্য অনেকের থেকেই ভালো গল্প বলতে সক্ষম। তাঁরা অনেক বেশি মাত্রায় বেশিসংখ্যক মানুষকে কল্পনাপ্রসূত গল্পগুলোকে সত্যি বলে বিশ্বাস করাতে পারেন।
জার্মান লেখক গুন্টার গ্রাস ১৯৯৯ সালে নোবেল পুরস্কার পান।