নরসিংদীর রায়পুরায় মির্জাপুর ইউনিয়নের মেরাতুলি গ্রামে প্রতিবছরের মতো এবারও জালাল উদ্দীন খন্দকার গুরুজির মহাপ্রয়াণ দিবস উপলক্ষে বাউলদের নিয়ে পালিত হয়েছে আধ্যাত্মিক গানের মহোৎসব। এ উপলক্ষে গত রোববার রাতভর মেরাতুলি গ্রামে গান পরিবেশন করেন টিভি পর্দার জনপ্রিয় শিল্পী সাগর বাউল, ডলি মণ্ডল, হামিদা পারভিন ও রাখি শবনম প্রমুখ। ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’—বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের আধ্যাত্মিক বাণীর স্লোগানে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এই মহোৎসবে লালনের রেখে যাওয়া মানবমুক্তির অর্ধশতাধিক আধ্যাত্মিক বাণীসংবলিত গান গাওয়া হয়। গত রোববার সন্ধ্যার পর থেকেই মহোৎসবে জড়ো হতে থাকেন দূর-দূরান্তসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েক হাজার মানুষ।
জানা গেছে, উপজেলার মেরাতুলি গ্রামে ১৯১৩ সালে ৯ সেপ্টেম্বরে জালাল উদ্দীন খন্দকার জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ব্রিটিশ শাসনামলে জেলা প্রশাসক ছিলেন। জীবদ্দশায় আধ্যাত্মিকতা লাভ করেন। চাকরিজীবন শেষে মানবসেবায় আত্মনিয়োগ করেন। লিখেছেন অসংখ্য আধ্যাত্মিক বই। ১৯৯৯ সালে ১৩ মার্চ তিনি মারা যান। তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে ভক্ত ও স্বজনদের উদ্যোগে নিজ গ্রামের বাড়িতে জন্ম ও প্রয়াণ দিবসে পালন করা হয় এই উৎসব। এ উপলক্ষে চলে গ্রামীণ মেলা।
অনুষ্ঠানে আসা ভক্ত রাজু বলেন, ‘২০০০ সালে শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিবছর এই মহোৎসবের অপেক্ষায় থাকি। গুরুজির প্রয়াণ দিবসের মহোৎসবে এসে সারা রাত আধ্যাত্মিক গান শুনে আমার মতো অনেকেই আনন্দিত হন।’
মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মন্জুর এলাহী বলেন, ‘আমরা গর্বিত এমন এক আধ্যাত্মিক মানুষের জন্ম আমাদের এই গ্রামে। সবাই মহোৎসবে এসে আনন্দ পান। প্রতিবছর এদিনটির অপেক্ষায় থাকতে দেখি হাজারো ভক্তকে।’
কথা হয় জালাল উদ্দীন খন্দকারের মেয়ের জামাই হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, জালাল উদ্দীন খন্দকার আধ্যাত্মিক মানুষ ছিলেন। চাকরিজীবন শেষে সবসময় পরোপকারে নিয়োজিত থেকে আধ্যাত্মিক ধ্যান-জ্ঞানে মত্ত থাকতেন। তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে বাড়িতে গ্রন্থাগার স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিবছর ৯ সেপ্টেম্বর তাঁর জন্ম দিনে এবং ১৩ মার্চ তাঁর প্রয়াণ দিবসে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে যাচ্ছি। ২০০০ সালে এই উৎসবের শুরু। আশা করি, যুগ যুগ ধরে চলবে এই মহোৎসব।’