ফরিদপুরের বিভিন্ন স্থানে নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে চলছে অবাধে মাছ শিকার। খাল-বিলে ও জলাশয়ে জাল দিয়ে ফাঁদ পেতে মাছ ধরছেন জেলেরা। এতে দেশি নানা প্রজাতির মাছের অবাধ বিচরণ ও মাছের বংশ ধ্বংস হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করছে সচেতন মহল।
জেলা মৎস্য অফিস বলছে, নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জালে মাছ ধরার বিষয়ে তারা সতর্ক আছে। তবে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
জানা গেছে, চতুর্ভুজ আকৃতির লোহার রডের তৈরি গোলাকার বেড়ির চারপাশে চায়না জাল দিয়ে তৈরি করা হয় চায়না দুয়ারি জাল। আকারভেদে এ জাল ৫২ হাত আবার ৭০ হাত পর্যন্ত লম্বা হয়। এই জাল দিয়ে ফরিদপুরের পদ্মা, মধুমতি, আড়িয়াল খাঁ, ভুবনেশ্বর, কুমারসহ বিভিন্ন বিল, হাওর-বাঁওরে মাছ ধরছেন জেলেরা। এতে দেশীয় প্রজাতির ছোট-বড় মাছ আটকা পড়ছে। স্বল্প ব্যয়ে ও পরিশ্রমে অধিক আয়ের উৎস হওয়ায় জেলেদের কাছে খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এটি।
ফরিদপুরের সদর উপজেলার ডিক্রীরচর, নর্থ চ্যানেল ও চরমাধবদিয়ায় গিয়ে দেখা গেছে, পদ্মা নদী থেকে চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে ধরা দেশীয় প্রজাতের বিভিন্ন মাছে পোনা বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
সদর উপজেলার ডিক্রীরচর ইউনিয়নের আলিয়াবাদ এলাকার মোয়াজ্জেম নামের এক মাছশিকারি জানান, চায়না দুয়ারি নদীর তলদেশে বসানো হয়। উভয় দিক থেকে ছুটে চলা যেকোনো মাছ সহজেই এতে আটকা পড়ে। একবার মাছ ঢুকলে বের হওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না।
জেলার নগরকান্দার উপজেলার ফুলসুতি এলাকার মাছশিকারি কাওছার ব্যাপারী জানান, নদীতে যে জায়গায় এই ফাঁদ পাতা হয়, তার নিশানা রাখার জন্য বাঁশের খুঁটি গাড়া (বসানো) হয়। দিনে দুবার এ জাল তোলা হয়। এই জালে সব ধরনের মাছ আটকা পড়ে। আসলে মাছ ধরে সংসার চলে। আর এতে বেশি মাছ ধরা পড়ে, তাই এ জাল পাতা হয়।
জেলার আলফাডাঙ্গা, মধুখালী, সালথা উপজেলার মধুমতি ও কুমার নদে মাছ ধরে এমন কয়েকজন জেলের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, প্রকারভেদে চায়না দুয়ারির দাম ৭ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। তবে আগে একটু কম ছিল। প্রশাসনের তৎপরতার কারণে এখন একটু বেশি দামে কিনতে হয়।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদ হাসান বলেন, বাজারের দেশীয় পোনা দেখে মনটা খারাপ হয়। এ জাল ধরা বন্ধে নিয়মিত স্থানীয় প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। তারপর কিছু অসাধু মানুষ গোপনে মাছ ধরার এ জাল পাতে। এতে মাছের বংশ ধ্বংস হয়। সঙ্গে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী লুকিয়ে বেশি দামে এ জাল বিক্রি করছে।
ফরিদপুর রঘুনন্দপুর এলাকার ব্যবসায়ী রেজাউল করিম জানান, পদ্মা নদীর পাড়ে প্রায় সকালে মাছ কিনতে যান। সেখানে দেশীয় মাছের পোনা বিক্রি হয়। অথচ এসব পোনা কয়েক মাসে বড় হতো। দুয়ারি জালে জেলেরা এসব পোনা ধরেন।
তিনি বলেন, এই চায়না দুয়ারি জালের কারণে দেশীয় মাছে বংশ শেষ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো একদিন দেশীয় মাছ দেখা যাবে না।
এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সরকার বলেন, ‘চায়না দুয়ারি আমাদের দেশীয় জাতের মাছ ধ্বংস করছে, এটা সত্য। আমরা এ বিষয়ে সতর্ক আছি। তবে মাছ ক্রেতা ও বিক্রেতাদেরও সচেতন হতে হবে। ইতিমধ্যে জেলায় বেশ কয়েকটি বাজারে চায়না দুয়ারি জব্দে অভিযান চালানো হয়েছে। সামনে এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে।