প্রায় এক সপ্তাহ ধরে রাজধানীতে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের হার কিছুটা নিম্নমুখী। হাসপাতালেও কমতে শুরু করেছে রোগী ভর্তি। কিন্তু সার্বিকভাবে রোগী কমলেও বাড়ছে শিশু রোগীর সংখ্যা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীতে ডায়রিয়া ও কলেরার চিকিৎসায় একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রে (আইসিডিডিআরবি) সপ্তাহখানেক আগেও রোগীদের যে ভিড় ছিল, তা কিছুটা কমে এসেছে। বর্তমানে দৈনিক ভর্তি রোগীর সংখ্যা হাজারের নিচে নেমেছে।
হাসপাতালের তথ্য বলছে, মার্চে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালে ভর্তি হন ৩০ হাজার ৩৭২ জন। আর চলতি এপ্রিলে গতকাল শনিবার বেলা ২টা পর্যন্ত ১৮ হাজার ৯৮৭ জন মানুষ পেটের পীড়া নিয়ে আসেন। ১০ এপ্রিল পর্যন্ত দৈনিক ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ২০০ পর্যন্ত ছিল। এর পর থেকেই কমতে শুরু করে, যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত। আগের দিন শুক্রবার আরও কমে হাজারের নিচে নামে। গতকাল প্রথম ১৪ ঘণ্টায় রাজধানী ও আশপাশের এলাকা থেকে
৫৮২ জন রোগী আসেন হাসপাতালে।
সার্বিকভাবে শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। মার্চের মাঝামাঝি থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের ৩০ শতাংশ রোগী শিশু হলেও বর্তমানে কম বয়সীদের আক্রান্তের হার আরও বেড়েছে বলে জানিয়েছে আইসিডিডিআরবি। গত দুই দিনের পরিস্থিতি অনুযায়ী বর্তমানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ৪০ শতাংশ শিশু। যাদের বেশির ভাগই পানিশূন্যতায় ভুগছে, যা ঝুঁকির কারণ বলে মনে করছেন আইসিডিডিআরবির সহকারী বিজ্ঞানী শোয়েব বিন ইসলাম।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ঢাকায় ডায়রিয়ায় আক্রান্তরা অধিকাংশই যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, দক্ষিণ খান, বাড্ডা ও মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা। এমন পরিস্থিতিতে আগামী দুই মাসের মধ্যে এসব এলাকার ২৩ লাখ মানুষকে দুই ডোজের কলেরার টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
তীব্র গরমের পাশাপাশি খাবারের সঙ্গে ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ডায়রিয়ায় অনেকে ভুগছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এ জন্য বাইরের খোলা খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। একই সঙ্গে পানি ভালো করে ফুটিয়ে খেতে বলা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বিশ্বে প্রতিবছর ১ থেকে ৪ কোটি মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশসহ বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার ৪৭টি দেশে কলেরার প্রকোপ দেখা যায়। আর বাংলাদেশে প্রতিবছর কলেরার শিকার হয় লাখের বেশি মানুষ।
শীত, বর্ষা ও গরমের সময়ে কলেরার প্রকোপ বাড়ে। সে অনুযায়ী এপ্রিলের শুরুতে বাড়তে থাকে। তবে এবার হয়েছে ব্যতিক্রম। নির্ধারিত সময়ের আগে গরম আর রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় নিরাপদ পানির অভাবে মার্চেই প্রকোপ শুরু হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে আইসিডিডিআরবি বলছে ২৪ জন।