শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে বেড়েছে ডাকাতি। এতে ওই এলাকায় রাতে বাস-ট্রাক পৌঁছালে চালকদের মধ্যে ডাকাত-আতঙ্ক বেড়ে যায়। গত দুই সপ্তাহে রাতে সড়কে গাছ ফেলে পরিবহন ও ট্রাক থামিয়ে কমপক্ষে ছয়টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বাসচালক, বাসের সুপারভাইজার ও যাত্রীদের কাছ থেকে লুট করা হয় টাকা, মোবাইল ও মূল্যবান জিনিস।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা নারয়ণপুর মোড়, খায়েরপট্টি ও নরসিংহপুর বাজার এলাকায় এই ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছেন বাসচালক, যাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। ডাকাতির হাত থেকে রেহাই পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।
জানা গেছে, এই আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে খুলনা-চট্টগ্রামসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার কয়েক হাজার যানবাহন প্রতিদিন চলাচল করে। ডাকাতির ঘটনায় এই এলাকায় বর্তমানে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ৬ ফেব্রুয়ারি খুলনা মেট্রো-চ ১১-১৭৩৩ ট্রাকে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় মোবাইল ও টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
ট্রাকচালক সাইদুল বলেন, ‘রাত ৩টার দিকে শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কের খায়েরপট্টি এলাকায় সড়কে গাছ ফেলে ট্রাক থামানো হয়। এ সময় কালো পোশাক পরা ৫ থেকে ৬ লোক দেশি অস্ত্র নিয়ে গাড়িতে হামলা চালান। এ সময় ২টি মোবাইল ও ৮ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। বাধা দিলে অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হাতের আঙুল কেটে ফেলে।’
তবে ডাকাতির বিষয়ে থানায় কোনো অভিযোগ করেননি তিনি।
চট্টগ্রাম মেট্রো-চ ট্রাকেও একই এলাকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ট্রাকচালক ইউসুফ আলী শেখ বলেন, ‘মাঝেমধ্যেই রাতে ওই এলাকায় ডাকাতির শিকার হয়েছি। বিশেষ করে ভেদরগঞ্জের নারায়ণপুর মোড়, খায়েরপট্টি ও নরসিংহপুর এলাকায় সড়ক বেশ ক্ষতিগ্রস্ত ও নির্জন। আমার ট্রাকে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ও প্রশাসন তৎপর হলে এই সমস্যা থাকবে না বলে আশা করছি।’
নরসিংহপুরের স্থানীয় বাসিন্দা নাসির গাজী বলেন, ‘গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে কালো পোশাক পরা ৬-৭ জন ট্রাকে ডাকাতি করেন। এ সময় চালকেরা চিৎকার দিলে ডাকাতদল মালেক ব্যাপারীর বাড়িতে ঢুকে পড়েন। ডাকাতদের তাঁরা চিনতে পারেন। পরে ডাকাতদের বাবা-মায়েরা সাবেক চেয়ারম্যান জিতু ব্যাপারীর মাধ্যমে টাকা ফেরত দেন। বিষয়টিও মীমাংসা করা হয়। এদিকে নারায়ণপুরেও একইভাবে বেশ কয়েকবার ডাকাতির ঘটনা ঘটলে এ বিষয়ে কোনো প্রতিকার হয়নি। জড়িতরাও রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।’
বালার বাজার এলাকার আবদুল মুন্সী বলেন, ‘দুই সপ্তাহ আগে নরসিংহপুর এলাকায় মুখোশ পরে চলন্ত ট্রাকে তাণ্ডব চালায় একটি ডাকাত দল।’
চরসেনসাস ইউপির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সবে দায়িত্ব পেলাম। ওই এলাকায় ডাকাতির ঘটনা অনেক শুনেছি। স্থানীয়দের সহযোগিতায় এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান হাওলাদার বলেন, ‘নির্বাচন ও করোনার কারণে পুলিশের একটু ব্যস্ততা ছিল। ডাকাতির ঘটনা শুনেছি। এখন থেকে সড়কে তদারকি বাড়ানো হবে। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ভেদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘৩-৪ মাস হলো ভেদরগঞ্জ এসেছি। যোগদানের পরে নারায়ণপুর বা এই থানা এলাকায় এ ধরনের কোনো ঘটনার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর আল নাসীফ বলেন, ‘গত মাসের আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ বিষয়ে মৌখিকভাবে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হবে।’