চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের কানসাট আমবাজারে ইজারাদারের লোকজনের দাপটে সাধারণ ব্যবসায়ী ও চাষিরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁদের নির্যাতন থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বড় বড় আড়তদার। এ নিয়ে প্রতিদিন আম বাজার এলাকায় ঘটছে মারামারির ঘটনা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গোপালনগর মোড়ে মারামারির ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, শিবগঞ্জের শ্যামপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান ভোদন কানসাট আমবাজারটি ২ কোটি ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ইজারা নেন। বর্তমানে সেখানে খাজনা আদায়ে দিন-রাত কাজ করছেন তাঁর প্রায় ৭০ শ্রমিক। নিয়ম অনুযায়ী সেখানে ১ মণ আমে ১০ টাকা নেওয়ার কথা। কিন্তু আম ব্যবসায়ী ও চাষিরা ক্যারেট ও ডালিতে করে আম আনেন। সেখানে একটি ক্যারেটে ২০ কেজি আম থাকলেও, ইজারাদারের লোকজনেরা আদায় করছেন ৬ থেকে ১০ টাকা। এ ছাড়া যাঁরা হাটের ওপর দিয়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আম নিয়ে যান, তাঁদের কাছ থেকেও টাকা আদায় করা হচ্ছে।
শিবনগর এলাকার ক্ষুদ্র আম ব্যবসায়ী সুজন আলীর অভিযোগ, কানসাট বাজার থেকে ৬০০ খালি ক্যারেট কিনে নওগাঁ নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় গোপালনগর মোড়ে পৌঁছালে ইজারাদারের লোকজন ক্যারেটপ্রতি ৬ টাকা করে মোট ৩ হাজার ৬০০ টাকা খাজনা দাবি করেন। এ সময় খাজনা আদায়কারীদের ক্যারেট কেনার রসিদ দেখালেও তাঁরা মানতে চাননি। এ নিয়ে সুজন আলী এবং তাঁর লোকজনের ওপর চড়াও হন তাঁরা।
অনলাইনে আম বিক্রির ব্যবসা করেন মিয়াপাড়ার রানাউল ইসলাম। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমবাজারের প্রবেশ মুখগুলোতে বসে থাকে হাটের ইজারাদারের লোকজন। আম নিয়ে বাজারে প্রবেশ এবং বের হওয়ার সময় খাজনা দেওয়ার পরেও নানা অজুহাতে হয়রানি করা হয়।
দাইপুখুরিয়ার ভ্যানচালক একরামুল হক বলেন, কানসাট বাজারে গত বুধবার চারটি ডালিতে আম বিক্রি করেন। চারটি ডালিতে আমের খাজনা বাবদ ৬০ টাকা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু খাজনা পরিশোধের রসিদ বৃষ্টির পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। বারবার মিনতি করার পরেও তাঁর কাছ থেকে বাড়তি আদায় করা হয় আরও ৬০ টাকা।
শাহবাজপুর এলাকার বাসিন্দা সেফাউর রহমান বলেন, তিনি এক ভ্যানে দুই ক্যারেটে আম, কিছু আটা ও খাদ্যদ্রব্য নিয়ে মেয়ের বাড়ি মনাকষায় যাচ্ছিলেন। এ সময় তাঁর কাছ থেকেও খাজনা আদায় করা হয়।
কানসাট আম আড়তদার সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক উমর ফারুক টিপু বলেন, চলতি মাসের ৭ তারিখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে আম-সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি সভা করা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, মণপ্রতি ১০ টাকার ওপরে খাজনা আদায় করা যাবে না। এর পরেও ইজারাদার সে নির্দেশনার তোয়াক্কা করছেন না। ইচ্ছেমতো খাজনা আদায় করছেন।
উমর ফারুক টিপু আরও বলেন, হাটের প্রতিটি প্রবেশ মুখে খাজনার তালিকা টাঙানোর কথা থাকলেও এখনো টাঙানো হয়নি। এ ছাড়া ইজারাদারের লোকজন কানসাটের বাইরে গিয়ে শ্যামপুর, মোবারকপুর এলাকাতেও আম ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোর করে চাঁদা আদায় করছেন।
ইজারাদার আসাদুজ্জামান ভোদন বলেন, শিডিউল অনুযায়ী রসিদের মাধ্যমে খাজনা আদায় করা হয়। সেখানে বাড়তি টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। এ ছাড়া কোনো খালি ক্যারেট থেকেও টাকা নেওয়া হয় না। তাঁর দাবি, একটি চক্র তাঁদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল হায়াত বলেন, ইজারাদার ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে শৃঙ্খলা ফেরাতে শিগগিরই উদ্যোগ নেওয়া হবে। কোনো ব্যবসায়ী যেন হয়রানির স্বীকার না হন, সে জন্য নজরদারি বাড়ানো হবে।