জাতীয় নির্বাচনের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও বর্জন করছে বিএনপি। যদিও দলের একটা অংশ শুরু থেকে নির্বাচনে আগ্রহী ছিল। ভোট বর্জনের সিদ্ধান্তে তাদের মত গুরুত্ব পায়নি। এরপরও কিছু নেতা উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন। এখন তাঁদের দল থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। গতকাল সোমবার পর্যন্ত এমন ৭৭ জন বহিষ্কারের শাস্তির মুখে পড়েছেন।
একের পর এক দলের এমন সিদ্ধান্ত মানতে পারছেন না ভোটের পক্ষে থাকা নেতারা। তবু দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পাচ্ছেন না তাঁরা।
নির্বাচন বর্জনে বিএনপির জন্য লাভ দেখছেন দলটির ওপরের সারির বেশির ভাগ নেতা। তাঁদের যুক্তি, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়। এটা বিশ্বাস করেই বিএনপি ভোট বর্জন করে আন্দোলনে আছে। এতে বিএনপির প্রতি জনগণের আস্থা বেড়েছে; যে কারণে এই নির্বাচন নিয়েও জনগণের মধ্যে আগ্রহ নেই।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আজকের পত্রিকাকে বলেন, জনগণ এরই মধ্যে ভোট বর্জনের ডাকে সাড়া দিতে শুরু করেছে। বিএনপির ভোট বর্জনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে জনগণ এবারও ভোটকেন্দ্রে যাবে না।
তবে ভোটে যাওয়ার পক্ষের অংশটি এখনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত মানতে পারেনি। তারা মনে করে, নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তে নেতাদের বহিষ্কার দলে ক্ষোভ বাড়াবে এবং বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। সংসদ নির্বাচনের মতো স্থানীয় এই নির্বাচনে ভোট বর্জনের আহ্বানও কাজে আসবে না।
তবে এসব বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে চান না কোনো নেতাই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁদের অনেকেই বলছেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে কথা বলার সাহস কারও নেই। তিনি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা মানতে বাধ্য সবাই। কাজেই নির্বাচন বর্জনের এই সিদ্ধান্ত দলের স্বার্থের বাইরে যাচ্ছে জেনেও বাধ্য হয়ে চুপ থাকতে হচ্ছে।
এমনকি বহিষ্কারের পরও দলের সিদ্ধান্ত নিয়ে খোলামেলা কথা বলতে চান না উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া অনেকে। তবে তাঁদের কেউ কেউ বলছেন, বহিষ্কার করে কী লাভ?
প্রার্থীদের এমন মনোভাবের সঙ্গে দ্বিমত না করে বিএনপির মধ্যম সারির এক নেতা বলেন, ‘বিএনপির আপাতত মাঠে ফেরার সম্ভাবনা নেই। এ অবস্থায় ভোটে না গিয়ে বিএনপির কী লাভ হবে, তা জানা নেই। এতে করে দলে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে, সাধারণ কর্মীদের মনে হতাশা আরও বাড়বে।’
যদিও এমন মনোভাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল) বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, দলের ১০০ জনের মধ্যে ৫ জনের চাওয়া উদাহরণ হতে পারে না। সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তটাই সব সময় মঙ্গলজনক হয়। সবাই তো আর সমান হবে না। কিছু মানুষ তো মানসিকভাবে দুর্বল থাকবে। তাদের কথা দিয়ে সবকিছু বিচার করা যাবে না।