আগৈলঝাড়ায় শব্দদূষণে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন যানবাহনের হর্ন, বিভিন্ন ধরনের প্রচারে মাইকের অতিরিক্ত ব্যবহারে শব্দ দূষণ সৃষ্টি হয় বেশি। প্রতিকারের জন্য আইন থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ সচেতন নাগরিকদের।
জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন সড়কে বাস, ট্রাক, লরি, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, টেম্পো, অটোরিকশা, টমটমে হাইড্রোলিক হর্ন অতিমাত্রায় ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়াও রোগীদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন ক্লিনিক মাইকের মাধ্যমে প্রচার চালায়। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ব্রয়লার মুরগি, মাছ, সবজি বিক্রেতাসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন মাইকে বিভিন্ন ধরনের প্রচার চালান। এতে উপজেলা শহরে শব্দ দূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে প্রতিনিয়ত হাইড্রোলিক হর্ন ও মাইকের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রচারে হাসপাতালের রোগীদের নাভিশ্বাস অবস্থা।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ এ সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ শব্দসীমা ৫৫ ডেসিবেল এবং রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৫ ডেসিবেল। একইভাবে নীরব এলাকায় দিনে ৫০ ও রাতে ৪০ ডেসিবেল, আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ ও রাতে ৪৫ ডেসিবেল, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০ ও রাতে ৫০ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০ ও রাতে ৬০ ডেসিবেল শব্দসীমা নির্ধারণ করা হয়।
এই মাত্রার চেয়ে বেশি শব্দ সৃষ্টি করাকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। বিধিমালায় হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকার নির্ধারিত কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই সকল জায়গায় মোটর গাড়ির হর্ন বাজানো বা মাইকিং নিষিদ্ধ।
উপজেলা এনজিও সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজল দাশ গুপ্ত বলেন, উপজেলার বেশির ভাগ সড়কেই মাইকে বিভিন্ন প্রচার ও গাড়ির হর্নে চলা কষ্টদায়ক।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আর এমও) চিকিৎসক মাইন মোল্লা জানান, উপজেলা হাসপাতালে শত শত রোগী প্রতিদিন চিকিৎসা নেন। মুমূর্ষু রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি থাকেন। কিন্তু নানা রকম যানবাহনের মুহুর্মুহু হর্নের আওয়াজে রোগীদের অবস্থা বেহাল।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা চিকিৎসক এখতিয়ার আল মাইন বলেন, শব্দ দূষণের কারণে শ্রবণ ও স্মরণ শক্তি কমে যায়। শিশুদের মধ্যে মানসিক ভীতির সৃষ্টি হয়। মাত্রাতিরিক্ত শব্দের কারণে মানুষের কারোনারি হার্ট ডিজিজ, কণ্ঠনালির প্রদাহ, উচ্চ রক্তচাপ, নিদ্রাহীনতা হতে পারে। হাসপাতাল এলাকায় মাইকিং ও হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল হাশেম বলেন, ‘শব্দ দূষণ যারা করছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর চেয়ে এই আইন ও বিধিগুলো সম্পর্কে মানুষকে জানানোটা বেশি জরুরি। দ্রুত প্রচার শুরু করব।’
উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত বলেন, এ বিষয়ে সচেতন নাগরিক ও সংশ্লিষ্টদের ডেকে সভা করা হবে। তারপরও শব্দ দূষণ রোধ করা সম্ভব না হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।