সারা দেশে দোকানপাট ও মার্কেট খোলা, পাড়ায় পাড়ায় বিয়ের আয়োজন চলছে। এদিকে শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই টিকার আওতায় চলে এসেছে। এমন অবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা এল।
তাহলে ছাত্র-ছাত্রীদের টিকা দিয়ে আমাদের কী লাভটা হলো? আমরা কোটি কোটি টাকা খরচ করে টিকা কিনে শিক্ষার্থীদের টিকা দিয়েছি। এখন যদি অজুহাত দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতেই হয়, তাহলে এত টাকা খরচ করে আমাদের কী লাভ হলো।
সারা বিশ্বে আগে মার্কেট বন্ধ করে, তারপরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করবে কি না, সে বিষয়ে চিন্তা করে। আর আমাদের দেশ একদম উল্টো। আমরা কোনো কিছু না ভেবেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দিয়ে দিই। শিক্ষা খাতের ক্ষতি হলো অপূরণীয়। আমরা সাময়িকভাবে এই ক্ষতি অনুভব না করলেও ভবিষ্যতে এর একটা প্রভাব থাকে। টাকার ক্ষতি পূরণ করা সহজ, কিন্তু শিক্ষার্থীদের এই ক্ষতি পূরণ করা কঠিন।
সরকার আগের রাজা-বাদশাহদের মতো এলান জারি করে দিতে পারত যে, সব বন্ধ। কিন্তু সব খোলা রেখে বলে দিচ্ছে শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। করোনার এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট অতটা শক্তিশালী নয়। এটা এখন মানসিক ব্যাপার, আমার বাসায় তিনটা মেয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে, তিন-চার দিন পর ভালো হয়ে গেছে। এখন বিষয়টা এমনই। এখন শুধু একটু সতর্ক থাকলেই হয়। তারপরেও স্বাস্থ্যবিধি কীভাবে মানা যায়, সেটা করতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ক্ষতিটা দীর্ঘ, বই থেকে মন উঠে গেলে, আবার মন বসাতে সময় লাগে। এরপরও সরকার যদি মনে করে বন্ধ করবে, তাহলে কিছু করার নেই।
দেড় বছর বন্ধের পর দুই-তিন মাসে শিক্ষাজট তো চলে যায়নি। সামনে আরও শিক্ষাজট বাড়বে। গত দুই মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রেখেছে বলেই যে জট কেটে গেছে, তা নয়। এই জট সামনে আরও ঘনীভূত হবে। সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের আগে মার্কেট, দোকানপাট, গার্মেন্টস বন্ধ করে আসুক না। প্রথমেই কেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হবে? তারপরও শিক্ষার্থীরা তো টিকা নিয়েছে। শিক্ষকেরা ও শিক্ষার্থীদের চেয়েও কলকারখানায় যারা কাজ করছে, তারা অনেক কম টিকা নিয়েছে। কিন্তু সরকার কী করে প্রথমেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়?
লেখক: ড. কামরুল হাসান মামুন অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়