কক্সবাজার জেলার প্রধান নদী বাঁকখালী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। রামু উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলছেন। বৈধ দুজন ইজারাদার থাকলেও তাঁরা নির্ধারিত সীমানার বাইরে গিয়ে ইচ্ছেমতো বালু তুলে যাচ্ছেন। তা-ও আবার, বিধি লঙ্ঘন করে ড্রেজার দিয়ে তুলছেন।
যদিও বাঁকখালী নদী রক্ষায় বালু না তুলতে উচ্চ আদালতের নির্দেশ রয়েছে।
রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের থিমছড়ি থেকে চাকমারকুল ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার নদীজুড়ে শতাধিক অবৈধ ড্রেজার দিয়ে দিনরাতে বালু তোলা হচ্ছে। অথচ বাঁকখালী নদীর রামু অংশে সরকারি বৈধ ইজারাদার রয়েছে মাত্র দুজন।
সরকারি ইজারার নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, রামুতে ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের বাজার-সংলগ্ন বাঁকখালী নদীর নির্দিষ্ট অংশজুড়ে এ বছর ইজারা নিয়েছেন রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল হক চৌধুরী। অন্যদিকে চাকমারকুল ইউনিয়নের বালুমহাল ইজারা নিয়েছেন খালেদ হোসেন টাপু।
এ দুজন বৈধ ইজারাদার হলেও আইনের তোয়াক্কা না করে নির্ধারিত সীমানার বাইরে গিয়ে ড্রেজার ও এককালের বসিয়ে ইজারার শর্ত ভেঙে বালু উত্তোলন করছেন। পাশাপাশি নামে-বেনামে ইজারা না থাকার পরেও একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বালু তুলছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
ইতিমধ্যেই অবৈধ এসব ড্রেজারে বালু তোলার কারণে কয়েক দফায় ভাঙনের শিকার হয়েছে স্থানীয় বাঁকখালী নদী পাড়ের বাসিন্দারা। ১৯৯৭-৯৮ সালে পূর্ব রাজারকুল গ্রাম ও গেলো বছর দক্ষিণ মিঠাছড়ির উমখালীতে বড় অংশ বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে, গ্রামছাড়া হয়েছে শতাধিক পরিবার।
মিঠাছড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা মুফিজ বলেন, ‘আর কত দিন এ বসতভিটায় থাকতে পারব জানি না। যেভাবে বাড়ির পাশেই নদীর পাড় ঘেঁষে ড্রেজারে বালু তোলা হচ্ছে, তাতে যেকোনো সময় আমাদের ঘরবাড়ি দ্বিতীয়বারের মতো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
ইজারার শর্তে ও আইনে স্পষ্টত নিষেধ থাকার পরেও কেন ড্রেজার ও এক্সকাভেটর বসিয়ে শর্ত ভেঙে বালু তুলছেন-এমন প্রশ্নে নুরুল হক চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়নের জন্যই আইনে নিষেধ থাকলেও ড্রেজার দিয়ে বালু তুলতে হচ্ছে। বাঁকখালীর বিভিন্ন পয়েন্টে ইজারা না থাকা শর্তেও আরও ৫০টি ড্রেজার মেশিনে বিভিন্ন ব্যক্তি অবৈধভাবে বালু তুলছেন।’
গত শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, চাকমারকুল ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্টে বসেছে সাতটি ড্রেজার মেশিন। স্থানীয়দের অভিযোগ, গত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী চেয়ারম্যান ও রামু উপজেলা চেয়ারম্যান ফোরামের সভাপতি নুরুল ইসলাম সিকদার প্রতি ড্রেজার মেশিন বাবদ দেড় থেকে দুই লাখ টাকা নিয়ে বালু তোলার অনুমতি দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নুরুল ইসলাম সিকদারের বলেন, ‘অবৈধ যেসব বালুমহাল আছে সেসব নিয়ে লেখেন। দরকার হলে আমি টাকা দিব, লেখেন। ডিসি সাহেব মেশিন বসানোর অনুমতি দিয়েছেন। ইউএনও সাহেব চার-পাঁচটার বেশি ড্রেজার মেশিন বসাতে মানা করেছেন।’
একই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন সিকদারও কোনো ইজারা না থাকা স্বত্বেও বসিয়েছেন দুটি ড্রেজার মেশিন এবং দিনে রাতে তুলছেন বালু।
ইজারা না নিয়েও কীভাবে তিনি বালু তুলছেন-জানতে চাইলে নাছির উদ্দিন সিকদার বলেন, ‘এ বছর সাংবাদিক খালেদ হোসাইন টাপুর সঙ্গে যৌথভাবে বালুমহাল ইজারা নিয়েছি। সরকারকে রাজস্ব দিয়ে ড্রেজার মেশিনে বালু তুলছি।’
চাকমারকুলের এসব অবৈধ ড্রেজারে বালু তোলার ফলে ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে কয়েকটি গ্রাম, দুটি কবরস্থান, দুটি মসজিদ ও কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক।
সেন্টার ফর পিপল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের পরিচালক মুহম্মদ আবদুর রহমান বলেন, নদীর তলদেশ খননের ফলে দুই পাড় ও প্রাকৃতিক মৎস্য আঁধার মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা মুস্তফা বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। শিগগির অভিযান পরিচালনা করা হবে।