আজ ১৫ ফেব্রুয়ারি, চৌগাছা ট্র্যাজেডি দিবস। ২০১৪ সালের এই দিনে যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মেহেরপুরের মুজিবনগর থেকে পিকনিক শেষে ফিরছিল।
শিশু শিক্ষার্থীদের বহনকারী বাসটি (রাজ-মেট্রো-জ-১১-০০৮০) রাত ৮টার দিকে চৌগাছা-মহেশপুর সড়কের ঝাউতলায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের খাদে উল্টে পড়ে যায়। এ সময় ঘটনাস্থলেই নিহত হয় বিদ্যালয়ের ৭ শিক্ষার্থী। আহত হয় আরও ৫০ শিক্ষার্থী। পরে আরও দুই শিক্ষার্থী মারা যায়।
দুর্ঘটনার আট বছরেও বিচারকাজ শেষ হয়নি। মামলার তদন্ত শেষে ২০১৪ সালেই প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হলেও এখনো বিচারকাজ শেষ হয়নি। আজ মঙ্গলবার দিবসটি স্মরণে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
ঘটনাস্থলে নিহতরা ছিল বেনাপোল বন্দর থানার ছোট আঁচড়া গ্রামের সৈয়দ আলীর দুই মেয়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী সুরাইয়া (১০) ও তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী জেবা আক্তার (৮), ইউনুস আলীর মেয়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী মিথিলা আক্তার (১০), রফিকুল ইসলামের মেয়ে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী রুনা আক্তার মীম (৯), লোকমান হোসেনের ছেলে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র আশরাফুজ্জামান শান্ত (৯), গাজিপুর গ্রামের সেকেন্দার আলীর ছেলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সাব্বির হোসেন (১০) ও নামাজ গ্রামের হাসান আলীর মেয়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী আঁখি (১১)।
১৩ দিন পর আহতদের মধ্যে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় বেনাপোলের ছোট আঁচড়া গ্রমের মনির হোসেনের ছেলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ইকরামুল (১১) এবং ৩২ দিন পর ১৯ মার্চ ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যায় একই গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইয়ানুর রহমান (১১)।
সড়কের ওপর শুকাতে দেওয়া লাল শাকের বীজ ডাটা গাছ (সবজি) বৃষ্টিতে ভিজে পিচ্ছিল হয়ে থাকায় এর ওপর দিয়ে গাড়ি চালানোয় এ ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ ও স্থানীয়রা সে সময় দাবি করেন। সে ঘটনায় চৌগাছা থানায় একটি মামলা করে পুলিশ। ঘটনায় সড়কে শাকের বীজ ডাটা শুকাতে দেওয়া চৌগাছা উপজেলার মান্দারতলা গ্রামের আলম ও শহিদুল এবং দুর্ঘটনাকবলিত বাসটির চালক ঝিকরগাছার ইসরাফিল ও তাঁর সহকারীকে আসামি করা হয়। আটক করা হয় শহিদুল ও আলমকে। কয়েক দিন পর তাঁরা দুজন জামিনে মুক্তি পান। তবে বাসটির চালক ইসরাফিল ও তাঁর সহকারী সে সময় পালিয়ে যায়। পরেও গ্রেপ্তার হয়নি। কিন্তু আট বছর পার হলেও মামলাটির বিচারকাজ শেষ হয়নি।
চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন, ‘মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। তদন্ত শেষে পুলিশ সে বছরই মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেছে। ঘটনাটি অনেক আগের হওয়ায় এর বেশি কিছু জানা নেই।’
মর্মান্তিক এ সড়ক দুর্ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে যায় এলাকাবাসী। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী শোকবার্তা দেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বেনাপোলে শিশুদের বাড়িতে গিয়ে অভিভাবকদের সান্ত্বনা দেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিল, জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও ৫ মিনিট নীরবতা পালনের কর্মসূচি পালন করা হয়।
পরে শিক্ষার্থীদের স্মরণে বেনাপোল পৌরসভার মেয়র আশরাফুল ইসলাম লিটন বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে দেন। সেখানে প্রতিবছর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের স্মরণ করে থাকেন। প্রতি বছরের মতো শিশু শিক্ষার্থীদের স্মরণে আজ সোমবার দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। বেনাপোলের সব বিদ্যালয় ও কলেজ, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়ে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাবেন।