অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলার আসামি তাঁরা। আদালত থেকে জামিনে আছেন। মামলা হলেও দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত তো হনইনি, উল্টো জামিন পাওয়ার পর বসেছেন গুরুত্বপূর্ণ পদে। যে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হয়েছে, সেটিও ফিরেছে ব্যাংকে। এখন চলছে অভিযোগ থেকে নাম কাটানোর আয়োজন। এই অভিযোগ রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
দুদকের মামলা ও শিক্ষা বোর্ড সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ১৮ লাখ ৪৪ হাজার ৮৩২ টাকার কাজ না করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদক ২০২০ সালে শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে। এই মামলার অন্য আসামির মধ্যে চারজন ঠিকাদার এবং বাকিরা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারী। গত ১৩ সেপ্টেম্বর আত্মসাতের ওই টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়েছে। টাকা ফেরতও পেয়েছে শিক্ষা বোর্ড।
শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, ব্যাংকে টাকা জমা হওয়ার পরপরই দুদকের মামলার চার আসামিকে পদায়ন করা হয় গুরুত্বপূর্ণ চারটি পদে। এর মধ্যে উপ-কলেজ পরিদর্শক নেসার উদ্দিন আহম্মদকে উপসচিব (প্রশাসন) শাখায়, উপবিদ্যালয় পরিদর্শক মানিক চন্দ্র সেনকে উপসচিব (ভান্ডার), অডিট অফিসার সেলিনা পারভিনকে উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (সনদ ও রেকর্ড) শাখায় এবং গোলাম ছরওয়ারকে নিরাপত্তা কর্মকর্তা থেকে সহকারী সচিব (প্রশাসন) পদে পদায়ন করা হয়েছে। দুর্নীতির মামলা
থেকে অব্যাহতি পেতে হলে প্রশাসন, ভান্ডার, সনদ ও রেকর্ড শাখা থেকে প্রত্যয়নপত্র দরকার হবে। অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান দায়িত্ব গ্রহণ করেই ওই চারজনসহ মোট ১৭ জনকে নতুন জায়গায় পদায়ন করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রথমে ঠিকাদারের নাম ব্যবহার করে ব্যাংকে টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। এরপর চার কর্মকর্তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। এটি আসলে একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে আসামিরা দায়মুক্তি পেতে পারেন। তিনি বলেন, টাকা জমা দেওয়া হয়েছে গত ১৩ সেপ্টেম্বর। অথচ ব্যাংক থেকে বিষয়টি বোর্ডকে জানতে দেওয়া হয়নি। এই চার কর্মকর্তা গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে আসার পরই টাকা ফেরত আসার কথা ব্যাংক থেকে বোর্ডকে জানানো হয়েছে।
ব্যাংক ও শিক্ষা বোর্ডসংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, একই দিনে প্রথম ধাপে সোনালী ব্যাংকের একই হিসাব নম্বর থেকে ৮ লাখ ৯১ হাজার ২৭৪ টাকা জমা দেওয়া হয়। এরপর আরেকটি হিসাব নম্বর ব্যবহার করে ৩ লাখ ৯৬ হাজার ৪২৫ টাকা এবং সর্বশেষ তৃতীয় আরেকটি হিসাব নম্বর ব্যবহার করে ৫ লাখ ৫৭ হাজার ১৩২ টাকা জমা দেওয়া হয়। তিন ধাপেই একই ইআইআইএন নম্বর ব্যবহার করা হয়। তিন ধাপে সেই টাকাটিই ফেরত দেওয়া হয়, যা আত্মসাতের অভিযোগ আছে। ফেরতের সময় দুদকের ওই মামলার বিবরণও উল্লেখ করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ টাকা বোর্ডে পৌঁছানোর কথা থাকলেও তা পৌঁছেছে ৮ ডিসেম্বর। দেরিতে টাকা জমা দেওয়ার বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের গ্রেটার রোড শাখার ব্যবস্থাপক তারিক হাসান মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘আপনি আমাদের অথরিটির কাছ থেকে জানতে পারেন।’
এদিকে টাকা জমা দেওয়ার পরপরই দুদকের মামলার আসামির খাতা থেকে ওই কর্মকর্তাদের নাম কাটানোর আয়োজন শুরু হয়েছে। তবে দুদকের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মামলা বিচারাধীন অবস্থায় টাকা ফেরত দিয়ে দায়মুক্তির সুযোগ নেই। তবে রায়ের সময় আদালত এটি বিবেচনা করতে পারেন।
কর্মকর্তাদের দায়মুক্তির সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বদলি বা পদায়ন স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এর মধ্যে অন্য কিছু খুঁজলে হবে না। তিনি দাবি করেন, কর্মকর্তাদের মামলার বিষয়টি তিনি জানতেনই না। তাঁদের সাময়িক বরখাস্ত করার দায়িত্ব ছিল আগের চেয়ারম্যানের।