সম্পাদকীয়
অন্নদাশঙ্কর রায় ছিলেন ছড়াকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, কবি ও চিন্তাবিদ। উনিশ শতকের বাঙালি রেনেসাঁ ঐতিহ্যের শেষ বুদ্ধিজীবী বলা হয় তাঁকে। ১৯০৪ সালের ১৫ মার্চ ওডিশা রাজ্যের ঢেঙ্কানালের এক শাক্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। তবে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার উত্তরপাড়া কোতরং ছিল তাদের পূর্বপুরুষের বসতি।
তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় ঢেঙ্কানালের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ঢেঙ্কানাল হাইস্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাস করে ভর্তি হন তৎকালীন পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কটক র্যাভেনশ কলেজে। আইএ পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯২৫ সালে তিনি পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। এরপর এমএ পড়াকালীন আইসিএস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে প্রশিক্ষণের জন্য ইংল্যান্ডে যান। সেখানে তিনি লন্ডনের ‘ইউনিভার্সিটি কলেজ’, ‘কিংস কলেজ’, ‘লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস’, ‘লন্ডন স্কুল অব ওরিয়েন্টাল স্টাডিজ’-এ পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
দেশে ফিরে তিনি ১৯২৯ সালে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে অ্যাসিসট্যান্ট ম্যাজিস্ট্রেট পদে যোগ দেন। ১৯২৯ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৮ বছর তিনি পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োজিত ছিলেন।
চাকরি ছাড়ার পর অন্নদাশঙ্কর রায় শান্তিনিকেতনে বসবাস শুরু করেন। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য বাঙালির আত্মদান তাঁর মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে। পরের বছর তিনি এক ঐতিহাসিক ‘সাহিত্য মেলা’র আয়োজন করেন শান্তিনিকেতনে। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে এই সাহিত্য মেলায় যোগ দেন কাজী মোতাহার হোসেন, মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন, শামসুর রাহমান, কায়সুল হকসহ আরও অনেকে।
তাঁর শান্তিনিকেতনের বাড়িতে নিয়মিত ‘সাহিত্য সভা’ হতো। এ ছাড়া দেশি-বিদেশি বহু পণ্ডিত তাঁর বাড়িতে অতিথি হয়ে আসতেন। নানা দেশের নানা ভাষার মানুষের সমাগমে সেখানে এক আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল তৈরি হতো। শান্তিনিকেতনে অবস্থানকালে অন্নদাশঙ্কর বিশ্বভারতীর কর্মসমিতির সদস্য ছিলেন।