নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে যত্রতত্র জাহাজ নোঙর অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন সিমেন্ট কারখানার ক্লিংকারবাহী জাহাজ শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতুর পর থেকেই ইচ্ছামতো নোঙর করে রাখে। এতে নদীর মূল চ্যানেল দিয়ে নৌযান চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে দাবি লঞ্চ মালিক সমিতির।
সাম্প্রতিক সময়ে শীতলক্ষ্যায় লঞ্চ দুর্ঘটনার পেছনে নৌযান চলাচলের পথ সংকুচিত হয়ে যাওয়াকে দায়ী করেছেন লঞ্চ মালিকসহ জনপ্রতিনিধিরাও। বিশেষ করে সিমেন্ট কারখানার ক্লিংকারবাহী জাহাজ পণ্য ওঠানামার অপেক্ষায় থেকে মূল নদীর বড় একটি অংশ দখল করে রাখে। এতে বেগ পেতে হয় নদীতে চলাচলরত অন্যান্য নৌযানকে। বিশেষ করে যাত্রীবাহী লঞ্চ চালকেরা বাল্কহেড ও জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লাগার ভয় নিয়েই সংকুচিত করে রাখা শীতলক্ষ্যা পাড়ি দেন।
সরেজমিনে শীতলক্ষ্যা নদীতে দেখা যায়, নির্মাণাধীন নাসিম ওসমান সেতুর (শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতু) পর থেকেই নদীর পশ্চিম প্রান্তে অসংখ্য জাহাজ নোঙর করে রাখা। একাধিক সিমেন্ট কারখানার পণ্যবাহী জাহাজ এই নদীতে অবস্থান করে থাকে। প্রভাবশালী এসব কোম্পানির জাহাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস দেখাননি কোনো লঞ্চ শ্রমিকই। ফলে দিনের পর দিন ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে হয়।
নাম গোপন রাখার শর্তে মেসার্স আল মদিনা নৌপরিবহন সংস্থার কর্মচারী বলেন, ‘এই জাহাজের কারণে ঠিকমতো লঞ্চ চালানো যায় না। আমাদের লঞ্চ ঝড় হলেও সমস্যা হয় না। ঝুঁকি কেবল এই জাহাজের কারণে অন্য কোনো জাহাজের সঙ্গে ধাক্কার লাগার। মাঝ নদীতে এভাবে জাহাজ রাখলে লঞ্চ কীভাবে চলাচল করবে? বিপরীত থেকে একটা বাল্কহেড বা জাহাজ এলে উভয়কে সিদ্ধান্ত নিতে হয়, কে কোন দিক থেকে পাড় হবে। কারণ, নদী এতটাই সংকুচিত যে উভয়েই মুখোমুখি অবস্থানে থাকে। জাহাজগুলো আরেকটু পশ্চিম দিকে নোঙর করে রাখলে এই সমস্যা হয় না।’
জাহাজের যত্রতত্র নোঙর করে রাখার প্রসঙ্গে চলতি বছরের মার্চে মুন্সিগঞ্জ ৩ আসনের সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘লুটেরা ধনিক-বণিক শ্রেণির কাছে দেশটা জিম্মি হয়ে গেছে। কত বার বললাম, এই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ নৌপথে শিল্পপতিরা লাইটার জাহাজগুলো যত্রতত্রভাবে নোঙর করে রাখে। ফলে যাত্রীবাহী লঞ্চগুলো স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে না। যখন-তখন দুর্ঘটনা ঘটে। আমি জানি না, এই দুর্ভোগ কত দিন থাকবে। আমার দাবি থাকবে, যেসব শিল্প মালিকদের লাইটার জাহাজ যত্রতত্র পার্কিং করে রাখে, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’
শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতুর কাছে এমন চিত্রের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ মালিক সমিতির জেলা সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শীতলক্ষ্যা নদীর চিত্র খুবই ভয়াবহ। বিআইডব্লিউটিএ কোনো কাজই করে না। জাহাজগুলো আগের মতো যত্রতত্র নোঙর করে রাখে। এমনকি মূল চ্যানেলের ওপরেও জাহাজ রেখে চ্যানেল বন্ধ করে দেয়। ’
জাহাজ যত্রতত্র নোঙরের বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের নৌ-নিরাপত্তা বিভাগের উপপরিচালক বাবু লাল বৈদ্য বলেন, ‘আমরা জাহাজগুলোর ওপর নিয়মিত তদারকি করি। এলোমেলো পার্কিং করলে তাঁদের বিরুদ্ধে জরিমানাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আমাদের এই কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।’
একই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর নৌ-থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, ‘কিছুদিন আগেও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জাহাজগুলোকে জরিমানা করা হয়েছে। আমরা তো নিজ থেকে জরিমানা করতে পারি না, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে অভিযান পরিচালনা করতে হয়। যেহেতু এই সমস্যা আবারও বাড়ছে, আমরা দ্রুতই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’