যশোরের বাঘারপাড়ার চিত্রা নদীতে পানি দূষণের হিড়িক পড়েছে। নদীর পাড়ে যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে আবর্জনা। এতে যেমন পানি দূষণ হচ্ছে, তেমন দূষণও বাড়ছে পরিবেশের। প্রশাসন এ বিষয়ে দোকানিদের অনেকবার সতর্ক করলেও কোনো লাভ হয়নি।
উপজেলার সদর বাজারের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে চিত্রা নদী। সরেজমিনে দেখা যায়, মাংসপট্টি ও পোলট্রি মুরগির দোকানের সব বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীতে। পাড়ে জবাই করা গরুর গোবরসহ সব বর্জ্য নির্বিঘ্ন নদীতে ফেলে যান দোকানিরা। মুরগির দোকানিরাও একই কাজ করছেন। তাঁরা দোকানে জবাই করা মুরগির সব ধরনের বর্জ্য এনে নদীতে ফেলছেন। এর ফলে আশপাশ দিয়ে দুর্গন্ধে চলাচল করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
চিত্রার তীরে বসবাসরত মানুষের অভিযোগ, নদীতে তেমন কোনো স্রোত নেই। নদীতে এবং তীরে ফেলে যাওয়া বর্জ্য সরতে না পারায় সেগুলো পচে পানি ও পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। নদীর তীর ধরে যাতায়াত করা মানুষেরও একই অভিযোগ।
পথচারী ইমরান হোসেন বলেন, এসব দোকান সংলগ্ন ব্রিজের ওপর এলেই যেন দম বন্ধ হয়ে আসে। গোবর আর রক্ত পচে এতটাই দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়েছে যে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
মুরগি ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আগে নদীর পানিতে এসব বর্জ্য ফেলা হতো। কিন্তু এখন আর ফেলা হয় না। পৌরসভা থেকে বর্জ্য ফেলার জন্য বড় বালতি দেওয়া হয়েছে। এখন সারা দিন ময়লা–আবর্জনা বালতিতে রেখে দিই। পরে পৌরসভার গাড়ি এসে সেগুলো নিয়ে যায়।’
গরুর মাংস ব্যবসায়ী সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের বর্জ্য ফেলার জন্য কোনো ডাস্টবিন দেওয়া হয়নি। আর গরুর রক্ত, গোবর ইত্যাদি বর্জ্য পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা হয়। তা ছাড়া মাংসপট্টিতে একটু গন্ধ তো থাকবেই।’
বাঘারপাড়া বাজারের হাট মালিক মুন্সি বাহার উদ্দীন বাহার বলেন, ‘নদীতে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় বিকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ভোগান্তিতে পড়ছে যাতায়াতকারীরা। প্রায় সময়ই দেখা যায় লোকজন নাকেমুখে হাত অথবা রুমাল চেপে সড়কে চলাচল করছেন। প্রতিদিন ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করলে এই দুর্গন্ধটা কমতে পারে।’
পৌর মেয়র কামরুজ্জামান বাচ্চু বলেন, ‘ব্রয়লার দোকানের আবর্জনা ফেলার জন্য ডাস্টবিন দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া গরুর রক্ত, গোবর তো আর ডাস্টবিনে জমা রাখার জিনিস না। এটা যত সময় যাবে ততই দুর্গন্ধ ছাড়াবে। এসব বর্জ্য গরু জবাইয়ের পরপরই মাটিতে পুঁতে রাখাই উত্তম। পরে সেখানে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিলে দুর্গন্ধটা কেটে যাবে।’
মেয়র কামরুজ্জামান বাচ্চু আরও বলেন, ‘পৌরসভার প্রত্যেক বাজারে আবর্জনা ফেলার জন্য ডাস্টবিন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ দোকানিরাই এসব ডাস্টবিনে আবর্জনা না ফেলে নদীতে ফেলছেন। তাঁদের বারবার সতর্ক করার পরেও মানছেন না। ভবিষ্যতে যদি তাঁরা নদীতে বর্জ্যে ফেলেন তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া আফরোজ বলেন, ‘নদী দূষণ বন্ধে অনেকবার দোকানিদের সতর্ক করা হয়েছে। বেশ কয়েকবার আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। এরপরও কেউ নদীতে আবর্জনা ফেললে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’