আমন ধান কাটা ও মাড়াই শেষে গ্রামে ঘরে ঘরে শুরু হয়েছে পিঠা বানানোর ধুম। এ জন্য চাল ছাঁটা ও গুঁড়া তৈরির জন্য একসময় গ্রামীণ জনপদে একমাত্র মাধ্যম ছিল ঢেঁকি। সেই চিত্র এখন বদলে গেছে। ঢেঁকির জায়গা দখল করে নিয়েছে আধুনিক যন্ত্র।
পীরগাছায় ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি এখন খুব একটা চোখে পড়ে না। কয়েক গ্রাম পর একটি দেখা গেলেও তা তেমন কাজে লাগে না। শুধু অল্প পরিমাণে চাল ছাঁটা এবং গুঁড়া ও চিড়া বানানোর জন্য গৃহবধূরা এটি ব্যবহার করে থাকেন।
এলাকার প্রবীণেরা জানান, প্রতি বছর অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গে ঢেঁকিতে নতুন চাল ও চালের গুঁড়া বানানোর ব্যস্ততা বেড়ে যেত। সে চাল দিয়ে পিঠাপুলি, ফিরনি, পায়েস তৈরি করা হতো। বিয়ে হয়ে যাওয়া মেয়ে ও জামাইদের কদর ছিল চোখে পড়ার মতো। এ ছাড়া বিয়ে, ঈদ ও পূজায় ঢেঁকিতে চাল ছাঁটা এবং গুঁড়া করা হতো। ঢেঁকিছাঁটা আউশ চালের ভাত ছিল সুস্বাদু।
অনেকে ঢেঁকিতে চাল, চিড়া ও গুঁড়া তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। খুব সকাল আর রাতে ঢেঁকির ধুপধাপ শব্দে মুখর ছিল গ্রামীণ জনপদ। ঢেঁকির শব্দে ঘুম ভাঙত অনেকের। সেই ধুপধাপ শব্দ আর শোনা যায় না।
বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। বাজার বা পাড়ার মোড়ে মোড়ে বসেছে ধান ছাঁটার আধুনিক যন্ত্র। এসবের ছোঁয়ায় নেই ঢেঁকির প্রচলন। ভবিষ্যতে হয়তো জাদুঘর ছাড়া কোথাও এর দেখা মিলবে না।
সম্প্রতি উপজেলার হিন্দুপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা মেলে ঢেঁকির। ধুপধাপ শব্দে চালের গুঁড়া তৈরি করছিলেন উষা রাণী ও পলি রাণী। উষা বলেন, ‘অল্প জিনিস মেশিনোত কোটা সমস্যা। তাই হামরা বাড়িত ঢেঁকি থুইছি। যখন-তখন চালের আটা ও চিড়া কোটা যায়। ঢেঁকিছাঁটা চাল ও চালের পিঠার গন্ধ অতুলনীয়। ছোটবেলার পিঠার স্বাদ ও গন্ধ এখনো হামার মনে পড়ে।’
উপজেলার অনন্তরাম গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি আয়নাল হক বলেন, ‘আগে ঢেঁকিতে কিছু কুটপার গেইলে বউরা গুনগুন করি গান গাইতো। সেই ঢেঁকি নিয়া অনেক শিল্পীও গান কইছে। এখন কি আর সেই যুগ আছে? বাজারোত গেইলে মেশিন দিয়া অল্প সময়ে কুটপার কাজ করা যায়।’