করোনার কারণে দুই বছর আমের দাম নিয়ে খুশি হতে পারেননি রাজশাহীর চাষিরা। এ বছর আমের দামে হাসি ফুটেছে তাঁদের। মৌসুমের শুরু থেকেই জেলায় আমের দাম চড়া। ফলন কম হওয়ার কারণে দাম বেশি বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
রাজশাহীতে সবচেয়ে বড় আমের হাট বসে পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর এলাকায়। এই হাটে গিয়ে জানা গেছে, আমের সরবরাহ অন্য বছরের তুলনায় কম। মৌসুম শুরুর মাসখানেক পর হাটটি সাধারণত আমে ভরে গেলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। হাটে আম আসামাত্রই অনেকটা প্রতিযোগিতা করে কিনছেন আড়তদারেরা। এতে ভালো দাম পাচ্ছেন বাগানিরা।
গাছ থেকে যেন পাকা আম পাড়া হয়, এর জন্য কয়েক বছরের মতো এবারও জাতভেদে আম পাড়ার দিন ঠিক করে দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। এ অনুযায়ী গত ১৩ মে থেকে সব ধরনের গুটি আম পাড়া শুরু হয়। এরপর ২০মে থেকে গোপালভোগ, ২৫ মে থেকে লক্ষ্মণভোগ ও রানিপছন্দ এবং ২৮ মে থেকে ক্ষীরসাপাত বা হিমসাগর পাড়তে শুরু করেন চাষিরা।
এবার শুরু থেকেই ভালো মানের মণপ্রতি গুটি আমের দাম এক হাজার টাকার ওপরে। গত বছর এই আম ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা মণ বিক্রি হয়। এবার গোপালভোগ দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা মণে বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর দেড় থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এবার শুরুতেই ক্ষীরসাপাত বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা দরে, গত বছর ছিল সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা।
বানেশ্বর হাটে প্রতিমণ লক্ষ্মণভোগ ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর দাম ছিল কম। তোতাপুরি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায়।
গতকাল শুক্রবার সকালে বানেশ্বর হাটে এক ভ্যান আম আনেন ক্ষুদ্রজামিরা গ্রামের চাষি রফিকুল ইসলাম। ক্যারেটে ক্যারেটে সাজানো আমভর্তি ভ্যানটি হাটে ঢুকতেই পাইকারি ক্রেতারা দরদাম শুরু করেন। রফিকুল বলেন, ‘গাছে এবার আম খুব কম। তাই হাটে সরবরাহও কম। এ কারণে পাইকাররা দাম বেশি বলছেন।’
বানেশ্বরের আমের আড়তদার সোহরাব আলী বলেন, ‘গত বছর আমের ফলন ভালো ছিল। কিন্তু করোনা আর রোজার কারণে দাম ছিল না। চাষিরা ভালো দাম পায়নি। ব্যবসায়ীরাও আম বেচতে না পেরে লোকসানে পড়েছিল। এবার আম কম হলেও দাম ভালো।’
এসব ব্যবসায়ী আড়তে আম কিনে ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্তে পাঠান। আবার অনেকে আত্মীয়স্বজনের কাছেও আম পাঠানোর জন্য বানেশ্বর বাজারে কিনতে আসেন। আম কিনে কুরিয়ারের মাধ্যমে স্বজনদের পাঠাবেন বলে বাজারে আসেন নিত্যরঞ্জন সরকার। তিনি বলেন, ‘এবার আমের দাম খুব বেশি। গোটা হাট ঘুরলাম, কারও কাছেই কম না। প্রতিবছর আত্মীয়স্বজনের কাছে আম পাঠাই বলে এবারও পাঠাচ্ছি।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহীর ৯ উপজেলা ও মহানগরে এবার ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমবাগান আছে। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ধরা হয়েছে ১১ দশমিক ৫৯ মেট্রিক টন। আমের উৎপাদন হতে পারে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৬ মেট্রিক টন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, ‘এবার গাছে আম কম। তাই দাম বেশি। এতে চাষিরা উপকৃত হচ্ছেন। এখন পর্যন্ত কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়নি। বাকি সময়টা দুর্যোগ না এলে যে আম আছে, তা দিয়েই চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।’