কুষ্টিয়ায় কোনোভাবেই কমছে না চালের দাম। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সঙ্গে জেলা প্রশাসন এবং চালকল মালিকদের বৈঠকের পরও কোনো সুফল মেলেনি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ভোক্তারা। চালকল মালিকদের কারসাজিতেই দাম কমছে না বলে অভিযোগ তাঁদের।
গত ২০ মার্চ কুষ্টিয়ায় আসেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। মন্ত্রী কুষ্টিয়ার খাজানগর এলাকার চালকলগুলোর মজুত পর্যবেক্ষণ করেন। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চালকল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ চালের দাম বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা ও কেজিতে ২ টাকা কমানোর ঘোষণা দেন। তবে সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন এখনো দেখা যায়নি।
গতকাল জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৪-৬৫ টাকা করে। চালকল মালিকেরা জানান, তাঁরা প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৫৭-৫৮ টাকা দরে বিক্রি করছেন, কিন্তু খুচরা বিক্রেতাদের দাবি তাঁরা ৬২ টাকার নিচে মিনিকেট চাল কিনতে পারছেন না, এমনকি খুচরা বিক্রেতাদের কোনো রসিদও দিচ্ছেন না চালকল মালিকেরা।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিল গেট থেকে মিনিকেট চালের বস্তা এখনো আগের দামে ৩ হাজার ১০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে, যা কেজিতে পড়ে ৬২ টাকা।
পৌর বাজারের ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম সুবর্ণা অটো মিলের রসিদ দেখান, যেখানে ৩ হাজার ১০০ টাকা করে এক বস্তা চাল কেনার বিষয়টি উল্লেখ আছে। তিনি বলেন, ‘মুখে কমানোর কথা বললেও কার্যত তাঁরা আগের দামেই বেচছেন।’
একই কথা বলেন ব্যবসায়ী স্বপন হোসেন। তিনি বলেন, ‘৬২ টাকা কিনে পরিবহন খরচ ধরে ৬৪ টাকায় বিক্রি করছি। আমরা যেমন দরে কিনতে পারব, তেমন দামেই তো বেচব।’
কুষ্টিয়া পৌর বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা রিপন আলী বলেন, ‘খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর কয়েকজন চালকল মালিক এক চালানের চাল কেজিতে ১ টাকা কম দামে ছেড়েছিলেন। কিন্তু সেই মিনিকেট চালের মধ্যে অন্য চাল মেশানোর অভিযোগ শুনতে হয় ক্রেতাদের কাছ থেকে। অনেকে চাল কিনে তা আবার ফেরত দিয়ে যান।’
দিন মজুর আরশেদ আলী বলেন, ‘দিনে আয় ৩০০ সাড়ে ৩০০ টাকা। ৫ জনের সংসার, ওই টাকা দিয়ে চাল কেনার পর আর কিছু হাতে থাকে না।’
তবে ভোক্তা ও খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ মানতে নারাজ কুষ্টিয়া চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন সাধু। তিনি বলেন, ‘মৌসুমের শুরুতেই চালের বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে। মিল গেটে এখন ৫০ কেজির চালের বস্তা ২ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার ৯৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা কেজিতে ৫৮-৫৯ টাকা করে পড়ে।’
একই কথা বলেন জাহিদ চালকলের মালিক বজলুর রহমান। তিনি বলেন, ‘২ হাজার ৯০০ টাকাতে এক বস্তা চাল বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ পর বস্তায় ২০০-৩০০ টাকা কমে যাবে।’
মিল মালিকেরা বরাবরই সাধারণ জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন বলে মন্তব্য করেন সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), কুষ্টিয়ার সভাপতি রফিকুল আলম টুকু। তিনি বলেন, ‘মিথ্যাচার করে চালকল মালিকেরা লাভবান হচ্ছেন। সব সময়ই তাঁরা জনগণকে জিম্মি করে অধিক মুনাফা লাভ আসছেন। এঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে শক্তভাবে কাজ করাতে হবে।’
কুষ্টিয়ার বাজার কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, ‘চাল বিক্রির ক্ষেত্রে কিছু অনিয়ম লক্ষ্য করা গেছে, সেসব বিষয়ে আমরা কাজ করছি। তা ছাড়া নিয়মিতভাবে চালের বাজারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় বাজার তদারকি করা হচ্ছে। চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’