মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর এলাকায় একটি ভবনের বিস্ফোরণের ঘটনায় গুরুতর দগ্ধ গৃহবধূ শান্তা বেগমও মারা গেছেন। এ দুর্ঘটনায় এর আগে তাঁর স্বামী ও দুই ছেলে-মেয়ের মৃত্যু হয়। চারজনকে দাফন করা হয়েছে পাশাপাশি কবরে।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় শান্তা বেগমের মৃত্যুর খবর গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন এস এম আইউব হোসেন।
গত ২ ডিসেম্বর মুক্তারপুরের একটি ভবনে গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী শিশুসহ একই পরিবারের চারজন গুরুতর দগ্ধ হন। গত ৪ ডিসেম্বর সকালে ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শান্তার স্বামী কাওসার খান (৩৭)। এর আগে ২ ডিসেম্বর রাতে একই ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় তাঁদের ছেলে ইয়াসিন খান (৬) ও মেয়ে ফাতেমা নোহরা খানম (৩)।
কাওসার খান কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের বয়লা গ্রামের খান বাড়ির বাসিন্দা ছিলেন। তিনি মুন্সীগঞ্জের আবুল খায়ের গ্রুপে ওয়েল্ডার শ্রমিকের কাজ করতেন।
কাওসার খানের স্বজনেরা জানিয়েছেন, কাওসার স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান নিয়ে মুক্তারপুর এলাকায় একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় ভাড়া থাকতেন। গত ২ ডিসেম্বর ভোরে ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায়ই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে কাওসারের পরিবারের চারজনসহ পাঁচজন গুরুতর দগ্ধ হন।
গত ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কাওসার খানের গ্রামের বাড়িতে তাঁর মরদেহ আনা হলে সেখানে হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। গ্রামের বাসিন্দাদের চোখও জলে ভিজে আসে। এর আগের দিন আনা হয় তাঁর দুই সন্তানের মরদেহ। তখনো গ্রামটিতে শোকের ছায়া নামে আসে। পরে খানবাড়ি গোরস্থানে তিনজনকেই পাশাপাশি কবর দেওয়া হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে শান্তা বেগমের লাশ পৌঁছায় গ্রামের বাড়িতে। বিকেলে তাঁর মরদেহও স্বামী ও সন্তানদের কবরের পাশে দাফন করা হয়।
কাওসারের ছোট ভাই কাইয়ুম খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভয়াবহ বিস্ফোরণে আমার ভাই, ভাইয়ের দুই সন্তান চলে গেল। বেঁচে ছিলেন ভাবি। শেষমেশ তাঁরও মৃত্যু হলো। এর মধ্য দিয়ে পুরো পরিবারটিই শেষ হয়ে গেল। চারটি কবর পাশাপাশি দেখে সহ্য করা যায় না। বুক খাঁ খাঁ করে। কী দোষ ছিল তাঁদের? কেন তাঁদের এভাবে লাশ হতে হলো? আমরা চাই কার অবহেলায় এত বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে, এর সুষ্ঠু তদন্ত করা হোক। জানি, কোনো কিছুতেই তো আর আমার ভাই, ভাবি ও ভাতিজা-ভাতিজিকে ফিরে পাব না। যে ক্ষতি আমাদের হয়েছে, তা পূরণ হওয়ার মতো না। এরপরও এ ঘটনায় আমরা সরকারের কাছে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ চাই।’