যান্ত্রিক শহুরে জীবনে পাখির ডাকে জেগে ওঠা এখন হয়তো এক দীর্ঘশ্বাসের নাম। প্রতিদিনই কাটা পড়ছে গাছ, আবাস হারাচ্ছে পাখি, হারিয়ে যাচ্ছে তাদের কিচিরমিচির ডাক। মানিকগঞ্জের আব্দুল হান্নান দিনার যান্ত্রিক শহরে আবার পাখির ডাক ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। তাঁর পক্ষিশালায় তিনি প্রজনন ঘটিয়েছেন ফিঞ্চ পাখির।
ফিঞ্চ পাখি মূলত দেখা যায় অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকায়। এশিয়ায়ও এদের দেখা যায়। ছোট আকারের এই পাখির দৈহিক গঠন অনেকটা চড়ুই পাখির মতো। প্রজাতিভেদে বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। ডাকে মৃদু আওয়াজে।
সম্প্রতি মানিকগঞ্জ শহরের রিজার্ভ ট্যাংক এলাকায় হান্নানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাসার নিচতলার একটি কক্ষে পাখিদের পরিচর্যা করছেন তিনি। তিনি বলেন, মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষ করে কোনো চাকরিতে না ঢুকে তিনি ২০১২ সালে বিভিন্ন প্রজাতির ফিঞ্চ পাখি পালন শুরু করেন। প্রথম দিকে ৪ প্রজাতির ফিঞ্চ পালন করলেও এখন তাঁর সংগ্রহে রয়েছে ৩০ প্রজাতির তিন শতাধিক পাখি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফিঞ্চ হলো করডোন, পার্পল গ্রেনাডিয়ার, ওয়াক্সবিল, প্যারাডাইস ওয়াইডাহ, মাস্কডগ্রাস ফিঞ্চ, জাভা, কনিউর, আফ্রিকান গ্রে-প্যারোট। এসব পাখির মধ্যে সবচেয়ে দামি পার্পল গ্রেনাডিয়ার ফিঞ্চ, প্যারোট ফিঞ্চ, গোল্ডিয়ান ফেঞ্চ ও প্যারাডাইস ওয়াইডাহ। এসব পাখির বর্তমান বাজারমূল্য প্রতি জোড়া সর্বনিম্ন ৬০০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
আব্দুল হান্নান বলেন, ফিঞ্চ পাখি পোষার অন্যতম কারণ হলো, এই পাখি খাবার নষ্ট করে কম এবং অল্প জায়গায়ই পালন করা যায় এগুলোকে। মৃদু আওয়াজের এসব পাখি। এদের প্রধান খাবার সিডমিক্স এবং নরম খাবার। প্রতিদিন সকালে বীজজাতীয় খাবার যেমন কাউন, চিনা ক্যানারির খোসা দেওয়া হয় এগুলোকে খেতে। সপ্তাহে চার দিন খাওয়াতে হয় কাঁচা শাকসবজি ও সেদ্ধ ডিমের সালাদ।
এই উদ্যোক্তা জানালেন, ফিঞ্চ পাখি পালন করতে বাড়ির ভেতর সুন্দর পরিবেশের প্রয়োজন হয়। খাঁচার ভেতর বন-জঙ্গলের মতো লতাপাতা দিয়ে রাখতে হয়। পাখির লুকিয়ে থাকার মতো জায়গা করে দিতে হয়। তিনি জানান, বিদেশিদের পরামর্শ নিয়ে অনেক চেষ্টার পর তিনি ফিঞ্চ পাখির প্রজনন করাতে সক্ষম হয়েছেন।