ময়মনসিংহের বিভিন্ন উপজেলায় গো-খাদ্য খড়ের সংকট ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। বছরের এই সময়টাতে খড় সংকটের বিষয়টি অনেকটা স্বাভাবিক হলেও এবার কৃষকসহ খামারিরা খড়ের জোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। চাহিদার তুলনায় খড়ের জোগান কম থাকায় দামও বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এ কারণে এখন বাজারে শাকের মতো আঁটি সাঁজিয়ে বিক্রি হচ্ছে খড়।
খড়ের ক্রেতা মো. মোস্তফা মিয়া বলেন, ‘একটা দুধের গাভিসহ ছোট-বড় মিলিয়ে চারটি গরু আছে আমার গোয়ালে। গাভিটি প্রতিদিন তিন লিটারের মতো দুধ দেয়। খড়ের দাম বেশি হওয়ায় দুধ বিক্রি করে যে টাকা আসে, তা খড় কিনতেই চলে যায়।’ প্রতিদিন ১০ আটি করে খড় লাগে বলে জানান মোস্তফা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার গো-খাদ্যের চাহিদা মেটাতে শাক-সবজির মতো আঁটি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে খড়। পৌর শহরের কাঁচামাটিয়া নদীর পুরোনো ব্রিজের ওপর গেলেই দেখা মেলে খড় বেচাকেনার এমন দৃশ্য। উপজেলার দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসা প্রান্তিক কৃষকসহ ছোট খামারিদের সংখ্যাই বেশি।
ক্রেতারা কেউ নিচ্ছে ১০ কিংবা ২০ আটি, আবার কেউ ভ্যানগাড়ি নিয়ে পুরো সপ্তাহের খড় সংগ্রহ করছেন। প্রতি আঁটি খড় বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। চাহিদার তুলনায় খড়ের জোগান কম হওয়ায় খড়ের দাম দ্বিগুণ বলে দাবি ক্রেতাদের। আবার বিক্রেতারা বলছেন, বেশি টাকা দিয়েও খড় সংগ্রহ করতে পারছেন না। যে কারণে বাধ্য হয়ে দাম কিছুটা বেশি নিতে হচ্ছে।
খড় বিক্রেতা মো. আব্দুস ছাত্তার বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী উপজেলা কেন্দুয়া থেকে খড় সংগ্রহ করছি। চাহিদার তুলনায় খড় সংকট থাকায় অনেক বেশি দাম দিয়ে তা সংগ্রহ করতে হয়। এ কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে দাম একটু বেশি নিতে হচ্ছে।’ প্রতিদিন ৮-১০ হাজার টাকার খড় বিক্রি করতে পারেন বলে জানান তিনি।
ষাটোর্ধ্ব মো. ইদ্রিছ আলী ফকির বলেন, ‘হাগের (শাক) আডির মতো ২০-২৫ টেহা বেচতাছে বন (খড়)। যে টেহার বন পত্তিদিন কিইন্ন্যা গরুরে খাওয়াইতাছি, এর চেয়ে বেশিডি তো হাইন্যাবালা গোয়াইলো (গোয়ালঘর) ধোঁয়া দিই। আর কয়ডা দিন, এর পরে ধাওয়ামাড়ি (ধানকাটা) লাগলে বনের আর অভাব থাকত না।’
খামারি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বর্ষাকালে গো-খাদ্যের সংকট প্রত্যেক বছরই কম-বেশি হয়ে থাকে। তবে এ বছর দীর্ঘমেয়াদি বর্ষার কারণে বেশির ভাগ কৃষকের খড় নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে খড়ের দাম দ্বিগুণ।’
পৌর এলাকার খামারি সামী উসমান গনি বলেন, ‘একদিকে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে দাম দ্বিগুণ দিয়েও খড় সংগ্রহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে আমাদের মতো খামারিদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।’
এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম বলেন, ‘আমন ধান কাটা শুরু হলেই খড়ের দাম নিয়ন্ত্রণে এসে যাবে।’ প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকসহ খামারিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘খড়ে বিকল্প হিসেবে ঘাস চাষ করতে হবে। উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে উন্নত ঘাস চাষ হচ্ছে। মৌসুমে খড় সংগ্রহ করতে হবে।’ ওই সময়ে গরুর খাদ্য খড়ের দাম কম থাকে বলে জানান এই কর্মকর্তা।