দুর্বল অবকাঠামো আর অগ্নিদুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়েই চলছে রাজধানীর অনেক মার্কেট। কিছু মার্কেট পরিত্যক্ত ঘোষণার পরও তা বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন (উত্তর ও দক্ষিণ)। সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মালিকানাধীন খিলগাঁও তালতলা মার্কেট ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
ডিএনসিসির দ্বিতীয় পরিষদের ২৩তম করপোরেশন সভায় খোদ মেয়র আতিকুল ইসলাম এটি মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যেকোনো সময় মার্কেটটি ভেঙে পড়তে পারে। যদিও মার্কেটের অবকাঠামো অনেক ভালো দাবি করে মেয়রের এ বক্তব্যকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
জানা গেছে, তালতলা মার্কেট ১৯৮৬ সালে ৪ দশমিক ৫ একর জায়গার ওপর গড়ে উঠেছে। মার্কেট ভবন নির্মাণ করা হয় ১৯৮৮ সালে। পৃথক চারটি ভবনের সমন্বয়ে দুই তলা উচ্চতার মার্কেটটি তৈরি। মার্কেটে ওঠার সিঁড়ির মাধ্যমে একটি ভবনের সঙ্গে অন্যটিকে যুক্ত করা হয়েছে। মার্কেটটিতে নিবন্ধিত ৮৫০টি দোকান রয়েছে। আড়াই শর বেশি অস্থায়ী দোকান। প্রতিটি দোকানের মাসিক ভাড়া অবস্থানভেদে ১৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এসব দোকানে আদা-মসলা, মাছ-মাংস, টিভি-মোবাইল, পোশাক, প্রসাধনী, ফার্নিচারসহ সব ধরনের পণ্য পাওয়া যায়।
তালতলা সিটি করপোরেশন সুপার মার্কেট বণিক সমিতির সভাপতি হুমায়ুন কবির আজাদ বলেন, ‘মার্কেটটির ১০ তলার ফাউন্ডেশন রয়েছে; কিন্তু মার্কেট আছে দোতলা। আমাদের সিটি করপোরেশন ৯৯ বছরের জন্য দোকান বরাদ্দ দিয়েছে। অথচ মার্কেট ভবনের বয়স হয়েছে মাত্র ৩৫ বছর। এখন নিজেদের স্বার্থে একটি মহল মার্কেটটি ভাঙতে চাইছে।’ দুর্ঘটনা ঝুঁকির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের অব্যবস্থাপনা ও সংস্কারের অভাবে ছাদের কিছু জায়গা ড্যামেজ হয়ে গেছে। ডিএনসিসি প্রতিবছর ৭৬ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করলেও মার্কেট সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। অবকাঠামো ঠিক রেখে সংস্কার করলে মার্কেটটি এখনো ঝুঁকিমুক্ত করা সম্ভব।’
জানা গেছে, ২০১৩ সালে বুয়েটের একদল প্রকৌশলী মার্কেটটি পরিদর্শন করে প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মার্কেটের কাঠামোতে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের কোনো চিহ্ন নেই। ফলে মার্কেটের ছাদ, দেয়াল ও ছাদের বিভিন্ন স্থান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে দ্রুত সংস্কার জরুরি। এ সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে মার্কেটটি সংস্কারের সিদ্ধান্ত হলেও পরে বাস্তবায়ন হয়নি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মার্কেটটিতে কয়েকবার আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। সবশেষ গত বছরের ২৬ মার্চ আগুন লাগে। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও বেশ কিছু দোকানপাট পুড়ে যায়। আগেই এ মার্কেট অগ্নিনিরাপত্তায় ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। তারপরও ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। বণিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিলসাদ মাহমুদ বলেন, ‘ডিএনসিসি মেয়র দুই বছর আগে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি কমাতে ফায়ার হাইড্রেন বসানোর অঙ্গীকার করেছেন, এখনো বাস্তবায়ন করেননি।’
যাচাই-বাছাই করে মার্কেটকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা উচিত বলে মনে করেন ডিএনসিসি ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিতে অবকাঠামো ঠিক রেখে ১০ তলা ভবন করলে ঠিক আছে। মার্কেট ভাঙলে সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ এর সঙ্গে ১০ হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িয়ে রয়েছে।
এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘মার্কেটের অবকাঠামো ও ফায়ার সেফটি ইস্যুতে ঝুঁকি থাকতে পারে। তবে ঝুঁকি পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে রয়েছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। মরণফাঁদ বলার চেয়ে চিহ্নিত করে বের করা উচিত কী কী সমস্যা রয়েছে।
মার্কেটের বয়স হিসাব করে বলতে পারি, দোতলা উচ্চতার মার্কেটটি সংস্কার করে সচল রাখা যেতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, এখন বহুতল মার্কেট করা একটা সংস্কৃতি হয়ে গেছে। ঢাকায় অনেক বহুতল মার্কেট রয়েছে। কিন্তু সীমিত আয়ের মানুষের কাছে তালতলা মার্কেটের অনেক উপযোগিতা রয়েছে। শহরের বৈচিত্র্য বিবেচনায় মার্কেটটিকে টেকসই করে কীভাবে সংরক্ষণ করা যায়, সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।